asad Jessore

যশোরের কুখ্যাত সন্ত্রাসী বুনো আসাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষ

বাংলাদেশ অপরাধ

ডজন খানেক মামলার আসামী কুখ্যাত সন্ত্রাসী বুনো আসাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ যশোর শহরের লোকজন। বর্তমানে যশোর শহরের বেজপাড়া সহ আশেপাশের অঞ্চলের মানুষজনের কাছে আসাদুজ্জামান আসাদ ওরফে বুনো আসাদ এক মূর্তিমান আতঙ্ক।

জানা যায়, চাঁদাবাজি এবং সরকারী জমি দখল করে ঘর নির্মাণ (আইটি পার্কের পশ্চিম পাশ সংলগ্ন জমি দখল করে তিন তলা বাড়ি নির্মাণ), সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে মারধর করে ছিনতাই, বাড়ি নির্মাণে চাঁদা আদায়, মাদক কারবারি সহ এমন কোন অপরাধ নেই যে তারা করে না।

ডজনখানেক মামলার আসামী এই বুনো আসাদ। আসাদের এক ভাই সাইদুর রহমান জামায়াত শিবির রাজনীতির সাথে যুক্ত , অপর ভাই মোহাম্মদ তুহিন বিএনপির একনিষ্ঠ কর্মী। তার  স্ত্রী জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে সরকারী ভূমি অফিসে চাকরি করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়াও বেজপাড়ায় নান্নু চৌধুরী ওয়েল ফেয়ার ট্রাষ্ট এর জায়গায় স্কুল নির্মাণে ৩০ লাখ টাকা চাদা দাবি করে  বুনো আসাদ। চাঁদা না দেয়ায় ইট, সিমেন্ট নিয়ে যায় তার লোকজন। যার কারণে  স্কুল নির্মাণের মত মহৎ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি কাউসার নামে এক রাজমিস্ত্রীকে তুচ্ছ কারণে বেধড়ক পিটিয়ে মারাত্মক ভাবে আহত করে বুনো আসাদ ও তার লোকজন।

সম্প্রতি (২৫ জুলাই) আসাদুজ্জামান আসাদ ওরফে বুনো আসাদ ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে যশোর আদালতে ও কোতয়ালি থানায় পৃথক দুইটি মামলা হয়েছে। বেজপাড়া এলাকার দুইজন তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেন।

শহরের বেজপাড়া বনানী রোডের মদন কুমার সাহা আদালতে সাতজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। ওই মামলার আসামিরা হলেন, আসাদুজ্জামান আসাদ ওরফে বুনো আসাদ, তার ভাই সাহিদুজ্জামান সাইদ, তুহিন, মইন, বুনো আসাদের স্ত্রী উর্মি জামান, ছেলে আশিকুজ্জামান এবং সাদেক দারোগার মোড়ের মৃত মনিরুল ইসলামের ছেলে আরিফ হোসেন।

মদন কুমার সাহার অভিযোগ, বুনো আসাদের নেতৃত্বে এলাকার পূজা-উদযাপন কমিটির কাছে চাঁদা দাবি করে। বাদীর ছেলে অমিত কুমার সাহা পুজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য। বুনো আসাদের নেতৃত্বে পূজা-উদযাপন কমিটিতে দাবি করা চাঁদা দিতে নিষেধ করেন অমিত সাহা। এতে তার উপর ক্ষীপ্ত হয়ে আসাদ বাদীর ছেলের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদাদাবি করে। টাকা না দেয়ায় খুন করার ষড়যন্ত্র করতে থাকে।

জানা যায়, গত ২০ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বুনো আসাদের নেতৃত্বে অন্য সকল আসামি তার বাড়িতে যায়। এসময় বুনো আসাদ বাদীর ছেলে অমিতকে খুঁজতে থাকে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। ঘর থেকে বের হয়ে এসে বাদী তাদের গালিগালাজ করতে নিষেধ করেন। কিন্তু বুনো আসাদ এসময় বাদীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গলা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। বাদীকে ঠেকাতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলে তার মেয়েকেও মারপিট এবং শ্লীলতাহানী ঘটায়। এরপর জীবন ভয়ে ঘরে থাকা ৪০ হাজার টাকা চাঁদা স্বরুপ নিয়ে নেয়। এরপর তার অন্য সহযোগিরা এলোপাতাড়ি মারপিট এবং ঘরের মালামাল ভাংচুর করে।

এছাড়া ওই এলাকার কান্তা ইসলাম থানায় আরেকটি মামলায় উল্লেখ করেন, বুনো আসাদ ও তার তিন ভাই সাহিদুর রহমান সাইদ, তুহিন ও মইন, বুনো আসাদের ছেলে আশিকুজ্জামান এবং সাদেক দারোগার মোড়ের মৃত মনিরুল ইসলামের ছেলে আরিফ হোসেন।

এলাকায় বিভিন্ন অপকর্মে বাধা দেয়ায় বাদীর স্বামীর সাথে বিরোধের সৃষ্টি হয়। সে কারণে আসামিরা বাদীর স্বামীকে খুন জখম করার ষড়যন্ত্র ও সুযোগ খুঁজতে থাকে। তারই অংশ হিসেবে গত ২০ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা কমিটির অফিসের সামনে বসে থাকাবস্থায় বুনো আসাদের ভাই সাহিদুর রহমান সাইদ ও সাদেক দারোগার মোড়ের আরিফের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী বিপ্লব হোসেনের উপর পিস্তলসহ বিভিন্ন ধরণের ধারালো ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে হামলা করেন। তাকে মারপিট করে কাছে থাকা ১৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এসময় বিপ্লবের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়।

এছাড়াও বর্তমানে বিট পুলিশিং এর কমিটির পদ পেতেও মরিয়া এই কুখ্যাত সন্ত্রাসী। ধরনা দিচ্ছেন পুলিশ সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছে।

ভুক্তভোগীদের দাবি , যশোরের বেজ পাড়া সহ আশেপাশের লক্ষাধিক মানুষ তার সীমাহীন অত্যাচারে অতিষ্ঠ। কুখ্যাত এই সন্ত্রাসীর অপরাধের ন্যায় বিচার দ্রুত নিশ্চিত করার দাবি এলাকাবাসীর। একই সাথে দুদকের মাধ্যমে বুনো আসাদের অবৈধ সম্পদের তদন্তের দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল।

পুলিশ বলছে, বুনো আসাদের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত চলছে। অন্যায়কারীদের ছাড় দেয়া হবে না ।