অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেছেন, ছোটগল্পের রাজপুত্র হাসান আজিজুল হক বাংলায় সাহিত্যের একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করে গেছেন। প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তিনি পুরষ্কারের জন্য না লিখে মানুষের জন্য লিখতেন। উজানের দিকে নৌকা ভাসাতেন, চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতেন।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবনে বরেণ্য কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হকের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন রাবি উপাচার্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পান্ডের সঞ্চালনায় তিনি আরও বলেন, ১৯৫০-৬০ সালের দিকে বাংলা সাহিত্যে যারা যারা অবদান রেখেছিলেন হাসান আজিজুল হক তাদের মধ্যে অন্যতম। তার অসামান্য ভাষাভঙ্গি, অশ্রুতপূর্ব সংলাপ, অনাস্বাদিত চরিত্র নির্মাণ ও অনন্য গল্প বলার যে ধরণ তা গত ৫০ বছর ধরে বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের মুগ্ধ করে রেখেছে। আমরা দর্শন বিভাগকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব দিব যেন স্যারকে প্রতিবছর স্মৃতিতে স্মরণ করে।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা বলেন, হাসান আজিজুল হককে নিয়ে বলা আমার পক্ষে খুবই কষ্টের। বরেণ্য এই কথাসাহিত্যিক সাহিত্যজগতে চিরদিনের জন্য উজ্জ্বল নাম হয়ে থাকবেন। তিনি চলার পথে যে মানবিক যন্ত্রণা পেয়েছেন তার সাহিত্যকর্মে সেটা ফিরে এসেছে। তার লেখালেখির মাধ্যমে একজন নিগৃহীত মানুষকে মানবিক বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছিলেন। ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’ তিনি এই বাক্যটিকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন তার লেখনির মাধ্যমে। তিনি ভারত থেকে উদ্বাস্তু হয়ে বাংলায় এসেছিলেন, এটা আমাদের পরম সৌভাগ্য।
তিনি আরও বলেন, মনুষ্য সত্যকে তিনি যে পূর্ণতা দিয়েছেন সেটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার যে সাহিত্য প্রতিভা তা বাংলাদেশসহ ভারতে চিরদিন সমাদৃত হয়ে থাকবে। তিনি উদার ছিলেন, মানবতাবাদী ছিলেন। তার প্রতি আমাদের যে আবেগ আছে সেটি মোটেও কাচা আবেগ নয়, এটা গভীর আবেগ। এই আবেগ ধরে রাখতে পারলে আমাদের কল্যাণ হবে। তিনি আমাদের গভীরে গেঁথে আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সমাহিত করে আমরা চির স্মরণীয় করে রাখতে পেরে গর্বিত। যদিও এতে আমাদের বেদনা উপশম হয় না।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর বলেন, হাসান আজিজুল হক স্যার শারীরিকভাবে আমাদের মধ্যে নেই, তবে কর্মের মাধ্যমে তিনি আমাদের মধ্যে আছেন। তিনি শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ না বাংলা ভাষাভাষী সকল বাঙালির সম্পদ। তিনি একজন সফল শিক্ষক ছিলেন, জটিল বিষয়গুলোকে খুবই সুন্দর করে বোঝাতেন। তিনি তার সাহিত্যে যা লিখতেন তা বাস্তবে রূপ দিতে মাঠে নেমে করতেন।
এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ অবায়দুর রহমান প্রামাণিক, দর্শন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নিলুফার আহমেদ, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক বীর মুক্তিযোদ্ধা মলয় কুমার ভৌমিক, অধ্যাপক নুরুল হোসেন, অধ্যাপক আবু বকর, অধ্যাপক জুলফিকর মতিন ও হাসান আজিজুল হকের নাতি অনির্বাণ।
এর আগে সকাল ১০টায় কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।