ঝিনাইদহে চার বছরের এক শিশুকে মায়ের সাথে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শিশুটির কান্না থামাতে না পেরে বিচারক মায়ের সঙ্গে শিশুটিকে কারাগারে থাকার আদেশ দেন। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (২৬ জুন) বিকেলে ঝিনাইদহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, ২০২২ সালের ৭ সেপ্টম্বর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ছোট ভাটপাড়া গ্রামে এক গৃহবধু (২৮) নির্যাতনের শিকার হন বলে অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনায় স্থানীয় চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদু ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর গ্রাম্য শালিস বসিয়ে অভিযুক্ত ধর্ষক নায়েব আলীকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন। টাকা না দিলে ধর্ষকের স্ত্রী, ভাবি, বোন ও মেয়েকে লোক দিয়ে পাল্টা ধর্ষণের হুমকি দেন চেয়ারম্যান। সে সময় এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে জেলাব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে। এদিকে কথিত ধর্ষক নায়েব আলী হতদরিদ্র হওয়ায় শালিস বিচারের দুই লাখ টাকা দিতে না পেরে পালিয়ে বেড়াতে থাকেন।
এভাবে এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলে চেয়ারম্যানের পীড়াপীড়িতে ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর কালীগঞ্জ থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন ওই গৃহবধূ। মামলা রেকর্ডের পর পুলিশ ডাক্তারি পরীক্ষার জন্যে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে পাঠায় তাকে।
বিলম্বে করা ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত না পাওয়ায় নায়েব আলীর বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ষণ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। পুলিশের প্রতিবেদন পেয়ে চলতি বছরের ৩ এপ্রিল আদালতে ধর্ষণ মামলাটি খারিজ হয়ে যায়।
মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে নায়েব আলী গত ১৭ এপ্রিল ঝিনাইদহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মিথ্যা ধর্ষণ মামলার বাদি ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলায় ওই দিনই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
পরোয়ানা পেয়ে পুলিশ ১১ জুন ওই নারীর স্বামীকে গ্রেফতার করে। গত সোমবার ওই নারী আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় চার বছরের শিশু সন্তান কাঁদতে থাকে। এ সময় তার ফুফু জোর করে শিশুটিকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে চিৎকার চেচামেচি করতে থাকে।
এক পর্যায়ে ফুফু শিশুটিকে কোলে নিয়ে আইনজীবীর কক্ষে নিয়ে যান। তখন আদালতের আদেশে মায়ের কোলেই তুলে দেয়া হয় শিশুটিকে। বর্তমানে শিশুটি মায়ের সাথেই কারাগারে আছে।
আইনজীবী খন্দকার লিয়াকত জানান, আসামি দম্পত্তির দুটি শিশু সন্তান রয়েছে। বড় ছেলের বয়স ছয় বছর। আর ছোট মেয়েটির বয়স ৪ বছর। ছেলেটি তার নানার বাড়িতে আছে। মেয়ে তার মায়ের সঙ্গে এসেছিল। মাকে কারাগারে নেয়ার সময় মেয়েটি কান্নাকাটি করছিল। তার ফুফু শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এ ছাড়া বাড়িতে এই ছোট্ট শিশুটিকে দেখভাল করার মতো কেউ নেই। শিশুটির পিতাও কারাগারে রয়েছেন। তাই আদালতে মায়ের সঙ্গে শিশুটিকে কারাগারে রাখার আবেদন করা হলে আদালত আবেদন মঞ্জুর করে মায়ের সঙ্গে শিশুটিকে কারাগারে রাখার অনুমতি দিয়েছেন।
শিশুটির ফুফু জানান, ভাবির করা মামলাটি খারিজের পর তার ভাই ও ভাবির নামে যে পাল্টা মামলা হয়েছে সেটা তাদের জানা ছিল না। আদালতের পিপি ইসমাইল হোসেন জানান, কারাগারে মায়ের সঙ্গেই থাকবে শিশুটি। আইনে এভাবে রাখার নিয়ম আছে।