পবিত্র রমজান মাস ঘিরে প্রতিবছরই বাজারে উত্তাপ ছড়ায় নিত্যপণ্যের দাম। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আর সে অজুহাতে রমজানের প্রথম দিনই হঠাৎ খাবারের দাম বাড়িয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলগুলোর ক্যান্টিন মালিকরা। এদিকে দাম দিয়ে দুবেলা খাবার খেতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী। অনেকে আবার একটু সাশ্রয়ী দামে খাবার খেতে ছুটছেন হল থেকে হলে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ জানালেও, মাথাব্যথা নেই হল প্রশাসনের।
আবাসিক হল সূত্রে জানা গেছে, রমজান শুরুর আগের দিন স্বাভাবিক দামে খাবার বিক্রি হলেও প্রথম রমজানেই তা কোনো কোনো হলে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অধিকাংশ খাবারে অন্তত ২০ থেকে ৪০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। স্যার এ এফ রহমান হল, মাস্টারদা সূর্য সেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, জহুরুল হক হল, কবি জসীমউদদীন হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলসহ প্রায় সব হলেই একই অবস্থা। তবে খাবারের দাম বাড়লেও বাড়েনি মান। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এ দামেই খাবার কিনে শিক্ষার্থীদের রোজা রাখতে হচ্ছে।
কয়েকটি আবাসিক হল ঘুরে দেখা যায়, করোনার আগে হলভেদে পোলট্রি মুরগির মাংসের প্রতি টুকরা ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হতো। করোনার পর সেটি ৪৫ টাকা হয়েছে। আর এবার সেই টুকরার দাম রাখা হচ্ছে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ টাকা। মাছের টুকরার দাম আগে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ছিল। পরে সেটি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা করা হলেও এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, গরুর মাংসের দাম আগে ৪০ টাকা থাকলেও পরে সেটি ৬০ টাকা করা হয়। এখন সেটি পাওয়া যাচ্ছে ৮০ টাকায়।
করোনায় দীর্ঘসময় বন্ধ থাকা আবাসিক হলগুলো খোলার পর পরই বাড়তে থাকে খাবারের দাম। তখন খাবারপ্রতি অন্তত ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সেই দাম আর না কমিয়ে রমজান ঘিরে ফের একধাপ বাড়ানো হয়। এতে অনেক শিক্ষার্থীর ক্রয়ক্ষমতার নাগালের বাইরে চলে গেছে হলের খাবার। সেহেরিতে সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার খেতে তাই হল থেকে হলে ছোটাছুটি করতেও দেখা গেছে অনেক শিক্ষার্থীকে।
স্যার এ এফ রহমান হলের তৃতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, রমজানে ক্যান্টিনে খাবারের দাম আগের চেয়ে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে; কিন্তু খাবারের মানে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এভাবে দাম বাড়ালে অনেক শিক্ষার্থীকে না খেয়ে থাকতে হবে।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী জহির রায়হান বলেন, যেহেতু রোজা রাখতেই হবে, আর অন্য কোথাও খাওয়ারও কোনো ব্যবস্থা নেই, তাই বাধ্য হয়ে এখানে খেতে হচ্ছে। ডিমের দাম কম বলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ডিম শেষ হয়ে যায়। এদিকে ডিম কম রান্না করে ক্যান্টিন মালিক শেষ পর্যন্ত আমাদের গরুর মাংস খেতে বাধ্য করছে। কারণ, এতে তার লাভ বেশি।
স্যার এ এফ রহমান হলের ক্যান্টিন মালিক বাবুল মিয়া বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশি। তাই আমরা বাড়িয়েছি। একদিনের মধ্যে এত দাম কীভাবে বাড়ল—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব হলেই খাবারের দাম বাড়িয়েছে।
তবে খাবারের দাম আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে উল্লেখ করে জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রহিম বলেন, আমি বাজার ভিজিট করেছি। কিছু জিনিসের দাম বাজারেও বেশি। ক্যান্টিনে যারা কাজ করে, তাদের নিয়ে বসেছিলাম। আমাদের শিক্ষকরাও বিষয়টি দেখভাল করছে।
সূর্য সেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মকবুল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ক্যান্টিনের পরিচালক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েক দফায় মিটিং করেছি। রমজানে কোনোভাবেই খাবারের দাম বাড়ানো যাবে না। সেইসঙ্গে মানও ঠিক রাখতে হবে।
হলে খাবারের অতিরিক্ত দাম সম্পর্কে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান বলেছেন, খামখেয়ালি ও অবিবেচকের মতো খাবারের দাম বাড়ানো যাবে না। এসবের যৌক্তিকতা আছে কি না, সে বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষরা তথ্য দেবেন।