bnp

বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে বিচ্ছিন্ন হতে পারে ঢাকা

রাজনীতি

আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, সে জন্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বাইরে থেকে যাতে কোনো সন্ত্রাসী বা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িতরা ঢাকায় ঢুকতে না পারে সে জন্য সমাবেশের আগেই সারা দেশের সঙ্গে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। 

ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তারা যাতে পাড়া-মহল্লায় অবস্থান নেন। পাশাপাশি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগও রাজধানীর প্রবেশপথে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে ১০ ডিসেম্বর। 

দলীয় সূত্র বলছে, ১০ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তরের অধীনে ২৬টি থানা ইউনিট, ৬৪টি ওয়ার্ড ও ৮০২টি ইউনিট এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অধীনে ২৪টি থানা ইউনিট, ৭৫টি ওয়ার্ড ও ৬০৫টি ইউনিটের নেতাকর্মীরা পাহারা বসাবেন রাজধানীর প্রবেশপথে। এ ছাড়া দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম ও সহযোগী সংগঠনগুলোও মাঠে থাকবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ৯ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণে স্টেডিয়ামের ২ নং গেটের সামনে সমাবেশ করবে। 

এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পাশাপাশি ডিসেম্বর মাসজুড়ে দিবসভিত্তিক নানা কর্মসূচি, সম্মেলন ও সমাবেশ করবে দলটি। রাজনীতির মাঠ দখলে রাখতে আগামী ২ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের সম্মেলন, ৩ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন আগামী, ৮ ও ৯ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন করা হবে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে এসব সম্মেলন হবে। বিএনপির সঙ্গে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে না গেলেও দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠ দখলে রাখবে।

সূত্র বলছে, ১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া অস্ত্র ও বিস্ফোরক নিয়ে কেউ যেন রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য প্রবেশপথে যাত্রী পরিবহন এবং  ট্রাকেও তল্লাশি জোরদার করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সূত্র আরও বলছে, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজধানী ও প্রবেশমুখগুলোতে সতর্ক পাহারায় থাকবেন। বিশেষ করে ১-১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত জোনভিত্তিক কর্মসূচি পালন করবে দলটি। ১০ ডিসেম্বর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ সাভারের মির্জা গোলাম হাফিজ কলেজ মাঠে জনসভার আয়োজন করবে। রাজধানীর প্রবেশমুখ সাভার, উত্তরা, ধোলাইপাড়, শনির আখড়া, গাবতলী, আমিনবাজার, গাজীপুরের টঙ্গী, মুন্সীগঞ্জ, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক শোডাউন করবেন ঢাকা জেলার নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানায় সমাবেশ করবে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ। এতেও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে আসা বিএনপির নেতাকর্মীরা বাধার মুখে পড়তে পারেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, ‘বিএনপির হুঙ্কার দীর্ঘদিন ধরেই শুনছি। বিএনপিকে মোকাবিলা করার কোনো প্রয়োজন আমাদের নেই। তবে জানমালের রক্ষায় সরকার কাজ করবে। তারা যদি ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের নামে অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য, পরিবহন পুড়িয়ে দেওয়া ও মানুষ পুড়িয়ে মারার মতো কোনো কাজ করে, কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না। সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের অজুহাতে আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। তাই ১০ ডিসেম্বর ক্ষতমতাচ্যুতির ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা বিএনপির সমাবেশের বিরুদ্ধে পাল্টা কোনো কর্মসূচি রাখছি না। তবে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল ২৪ ডিসেম্বর। এ ছাড়া ২৪ ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন হবে। আমরা সম্মেলনগুলোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ প্রসঙ্গে সময়ের আলোকে বলেন, ‘বিএনপি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করতে চায়। তারা এখন দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্র করছে। অতীতে হরতাল, অবরোধের নামে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছে। তারা ১০ ডিসেম্বর মহাসমাবেশের নামে বড় কোনো ধরনের সহিংসতা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর জবাব দেবে। তারা যদি শান্তিপূর্ণ কর্মসমূচি পালন করে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে আগামী ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দল সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে মাঠে থাকবে। তাদের যেকোনো সহিংস কর্মসূচি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করা হবে।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘বিএনপির মহাসমাবেশকে সামনে রেখে আমাদের কোনো কর্মসূচি নেই। তবে ডিসেম্বর যেহেতু বিজয়ের মাস, তাই এ মাসে প্রতিদিনই বিজয় উৎসব করব। কিন্তু বিএনপি যদি ১০ ডিসেম্বর কোনো অরাজকতা করে আমাদের নেতাকর্মীরা জবাব দেবে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বসে থাকবে না।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী সময়ের আলোকে বলেন, ‘রাজধানীতে ৯ ডিসেম্বর সমাবেশ করব আমরা। ওই দিন বড় শোডাউন হবে। তবে ১০ ডিসেম্বর যেহেতু বিএনপি সমাবেশ করবে, আমরাও কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজপথে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেব। এর উদ্দেশ্য বাধা দেওয়া নয়, বিএনপি-জামায়াতের সম্ভাব্য নৈরাজ্য ঠেকানো।’ আর এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির বলেন, ‘৯ ডিসেম্বর আমাদের সমাবেশ হলেও ১০ ডিসেম্বরও আমরা মাঠে থাকব, যাতে বিএনপি-জামায়াত কোনো সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে। থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট নেতাকর্মীরাও পাড়া-মহল্লায় অবস্থান নেবে।’

বিএনপি-জামায়াতকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলায় ১০ ডিসেম্বর নেতাকর্মীরা মাঠে প্রস্তুত থাকবে বলে জানান ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোর মধ্যে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানায় সমাবেশ করা হবে। তবে এটি বিএনপির সমাবেশের পাল্টা কোনো কর্মসূচি নয়।’ 

আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু বলেন, ‘আমরা সারা দেশে জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত।