Mobile phone মোবাইল ফোন

সাবধান! প্রতিদিন গড়ে ছিনতাই হয় ৩০০ মোবাইল

বাংলাদেশ অপরাধ

রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকা থেকে ছিনতাইকৃত দামি মোবাইলের যন্ত্রাংশ খুলে বেচাকেনা করছে চক্রের সদস্যরা। ৩ হাত ঘুরে এসব মোবাইলের যন্ত্রাংশ চলে যায় বিভিন্ন হাতে। ফলে ছিনতাইকৃত মোবাইল শনাক্ত করতে পারে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। 

জানা গেছে, যেসব দামি মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা যায় সেগুলো পরিবর্তন করে বিক্রি করে দেয় চক্রের সদস্যরা। আর যেমন মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করতে পারে না। সেগুলো ভেঙে কেসিং, ব্যাটারি, ক্যামেরা ও মনিটরকে পৃথক করে পার্ট পার্ট বিক্রি করা হয়। সম্প্রতি একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাই চক্রের ছোঁ মারা পার্টির সদস্যদের ১৬ জনকে গ্রেপ্তারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। 

গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- মো. মিজান, আমিরুল ইসলাম বাবু, শরিফ হোসেন, হৃদয়, রাজ, সুমন, সোহেল বাবু, হৃদয়, মনিরুজ্জামান, নাজমুল, মনির, ইমরান, ফারুক, আশরাফুল ইসলাম সজিব, আরিফ ও হাসান।

গোয়েন্দারা জানান, এ চক্রে ৩ জন মহাজন রয়েছেন। তাদের নেতৃত্বে চক্রের সদস্যরা ছিনতাই করে আসছে। এ মহাজনরা বিভিন্নভাবে বখে যাওয়া তরুণদেরকে থাকার জায়গা, খাবার ও গাজা-ইয়াবাসহ নেশার সামগ্রী দিয়ে তাদের ছত্রছায়ায় রাখেন। এমনকি ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়ে কারাগারে গেলেও তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন মহাজনরা। রয়েছে দুই জন ব্যবসায়ী। যারা ছিনতাইকৃত মালামাল স্বল্প মূল্যে কিনে বেশি দামে বিক্রি করেন।

শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গত তিনদিন গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগরে একাধিক টিম রাজধানীর বনানী, বিমানবন্দর, আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে বাস, প্রাইভেট কার সিএনজি অটো রিকশাতে চলাচলকারী যাত্রীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, স্বর্ণের চেইন, ঘড়িসহ মূল্যবান সামগ্রী ছো মেড়ে ছিনতাই করা চক্রের মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে আছে ছিনতাইকারী সদস্য, মহাজন/ জামিনদার, নিয়মিত চোরাই মালের ক্রেতা ও মোবাইল এক্সেসরিজ বিক্রেতা রয়েছেন। এসব ছিনতাইকারীরা প্রত্যেকেই মাদকাসক্ত। 

তিনি বলেন, ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ৩০০ মোবাইল ছিনতাই হয়। এ চক্রের অন্তত ১০০ জন রয়েছে। যারা প্রতিদিন রাজধানী ও আশপাশ এলাকার রাস্তায় ঘোরাফেরা করে। তাদের গ্যাং লিডারদের অর্থাৎ মহাজনরা কমপক্ষে তিনটি মোবাইল ছিনতাইয়ের টার্গেট দিয়ে দেন। সেই হিসেবে ঢাকা শহরে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ মোবাইল ছিনতাই হয়।

তিনি আরও বলেন, যাত্রারা যখন বাস বা গাড়ির জানালার পাশে বসে যখন কেউ ফোনে কথা বলে বা নেট ব্রাউজ করে তখনই ছিনতাইকারীরা ফোন গুলো চুরি করে। পরে মহাজনরা তাদের কাছ থেকে কম দামে ফোন কিনে নেয়। চক্রটি ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে যানবাহনে যাত্রীদের মূল্যবান জিনিসপত্র থাবা দিয়ে ছিনতাই করে আসছে। তাদের সবার নামে গাজীপুর এবং ডিএমপিতে একাধিক মামলা রয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে ছিনতাইকালে এ চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য অনুযায়ী ৩ ফেব্রুয়ারি অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু মোবাইল, এক্সেসরিজের জন্য ভেঙ্গে ফেলা মোবাইল, স্বর্ণের কানের দুলসহ বিভিন্ন চোরাই পণ্য উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, মিজান, শরীফ ও জয় বাবু হলেন ছিনতাইকারীদের মহাজন। এরা বিভিন্নভাবে বখে যাওয়া সক্ষম তরুণদেরকে থাকার জায়গা, খাবার ও গাজা-ইয়াবাসহ নেশার সামগ্রী দেয় এবং একটা পর্যায়ে ছিনতাই করতে সহযোগী হিসেবে নিয়ে যায়। ছিনতাইকারীরা তাদের কাছে ছিনতাইকৃত মালামাল জমা দেন। এসব মালামাল বিক্রি করা হয় পাইকার ফারুক ও সুমনের কাছে যারা পরে উত্তরখানের মোবাইল দোকানদার সজীবের কাছে এগুলোকে বিক্রি করে। বিক্রিত বাটন মোবাইল গুলো আস্ত অবস্থায় গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করলেও দামি কোম্পানির স্মার্টফোনগুলোর আইইএমআই পরিবর্তন করতে পারলে তা পরিবর্তন করে; না হলে মোবাইল গুলোকে ভেঙে তার কেসিং, ব্যাটারি, ক্যামেরা ও মনিটরকে পার্ট পার্ট করে বিক্রি করে যাতে মোবাইল গুলোকে শনাক্ত করে উদ্ধার করা না যায়।