কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের এক শিক্ষার্থী ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। রুমমেট জুনিয়র শিক্ষার্থীর সাথে দ্বন্দ্বের জের ধরে ফেসবুকে পোস্ট করে এক ছাত্রীনিবাসে এমন চেষ্টা চালায় ওই শিক্ষার্থী।
এদিকে এ ঘটনায় নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছেন দাবি করে ঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের অপর শিক্ষার্থী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত শনিবার রাত ৮ টার দিকে রুমে গেস্ট আনাকে কেন্দ্র করে সিনিয়র-জুনিয়র দুই শিক্ষার্থীর মাঝে বাকবিতণ্ডা হয়। এসময় সিনিয়র ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তার পক্ষে কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজনের কর্মীকে ডেকে নিয়ে জুনিয়রকে শাসায়।
পরে ১৪তম ব্যাচের একাউন্টিং বিভাগের জুনিয়র শিক্ষার্থীর পক্ষে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী মেসে আসে। এসময় দুই পক্ষই তর্কে জড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সেখানে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি মীমাংসা করেন।
পরে শনিবার রাত প্রায় ১১ টায় ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছেন দাবি করে বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন।
এরপরেই সিনিয়র ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফেসবুকে পাল্টা একটি পোস্ট করে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ঢাকা পাঠানো হয়। বর্তমানে সে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এদিকে ছাত্রীদের বাকবিতণ্ডার পর এক ছাত্রীর পক্ষে নজরুল হল ছাত্রলীগের ব্যবসায় অনুষদের কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী মেসে যান। আবার অপরদিকে আরেক ছাত্রীর পক্ষে দত্ত হল থেকে ব্যবসায় অনুষদের কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী মেসে যান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আসন্ন ব্যবসায় অনুষদ ছাত্রলীগের কমিটি দেয়ার কথা রয়েছে। এখানে দু’পক্ষেরই পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা রয়েছেন এবং জড়িয়ে পড়েছেন। এ ঘটনায় পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগের দু’পক্ষের নেতা-কর্মীদের প্ররোচণা রয়েছে। এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায় তাদেরকেও নিতে হবে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, মেয়েদের বিষয়ে সমস্যা সৃষ্টি বা সংগঠনকে জাড়ানোর চেষ্টায় জড়িতরা যে হলের হোক তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। যারা এটা নিয়ে রাজনীতি করতে চায় তারা কোনোভাবে পদ পাবে না। বরং তাদের জন্য সংগঠন পদক্ষেপ নিবে।
১৪তম ব্যাচের একাউন্টিং বিভাগের ওই শিক্ষার্থী বলেন, গত তিন মাস আগে আমি একটি রুম ভাড়া নেই। তারপর আমার রুমমেট হিসেবে উঠে রাবিনা ইসলাম ঐশী। উনি আমার রুমে উঠার পর থেকে গত দুইমাস ধরে নিয়মিত বান্ধবীদের নিয়ে আড্ডা, গান-বাজনা করেন।
রোববার আমার পরীক্ষা থাকায় ওনাদের বলার পরও পার্টি করতেছিলো। আমি মেস মালিককে জানালে ওনাদের লিমিটের বাইরে কিছু করতে নিষেধ করেন। তার কিছুক্ষণ পর মেস মালিক চলে গেলে ওনারা তিন বান্ধবী আমার সাথে খুব খারাপ আচরণ করেন। তারপর আমি বিষয়টি আবার মেস মালিককে বিষয়টি জানালে ওরা বাড়িওয়ালার সামনে আমাকে বাবা-মা তুলে গালি দেন এবং হুমকি দেন। আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এ ঘটনায় আত্মহত্যার চেষ্টা করার আগে ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, ‘জুনিয়র মেয়েটি আমাকে বলেন ‘আপনি রুম ছেড়ে দিবেন, আমি আপনাকে রুমে রাখতে চাচ্ছি না।’
যেখানে আমি নিজে নিজের ভাড়া দিয়ে থাকি। আমাকে মেস ছাড়তে বলা হয়েছে। তারপরেও আমি মেনে নিয়েছি। আমার অবর্তমানে বলা হয়েছে যে, ‘আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে মেস থেকে বের করে দেয়া হবে’।
এটা নিয়েও হয়তো কিছু বলতাম না। কিন্তু মুখের উপর একজন ছোটবোন বেয়াদবি করে যাবে তা মেনে নিতে আমার কষ্ট হচ্ছে। নিজের নামের উপর এত বড় দায় আমি আর নিতে পারছি না।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের কাছে একপক্ষ অভিযোগ পত্র জমা দিয়েছে। বিষয়টি যেহেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে তা আমরা জানতে পেরেছি।
প্রক্টর আরও বলেন, সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ড. জান্নাতুল ফেরদৌসকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমাদের কাছে ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ করেছে। এ অভিযোগে যাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তিনি এখনও হাসপাতালে। তিনি সুস্থ হয়ে আসলে আমরা তদন্ত শুরু করব।