পাকা আম এর উপকারিতা benefits of eating Mango

আম খাওয়ার উপকারিতা

স্বাস্থ্য লাইফস্টাইল

আম খাওয়ার উপকারিতা শতাধিক, যা জানলে আপনি রীতিমতো অবাক হয়ে যাবেন। আম আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে আপনাকে করে তুলবে চাঙ্গা। হিমসাগর, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, খিরসাপাতি; এসব নামেই যেন অর্ধেক প্রশান্তি। এরপরও যাদের গপাগপ আম খাওয়া চাই, তাদের জন্য একগাদা কারণ হাজির করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

এই গরমে আম কেনো খাবেন? জেনে নিন আম খাওয়ার উপকারিতাঃ

ক্যানসার-যোদ্ধা

কোয়েরসেটিন, ফাইসেটিন, আইসোকোয়েরসেটিন, অ্যাস্ট্রাগ্যালিন, গ্যালিক অ্যাসিড ও মিথাইল গ্যালেট নামের কঠিন নামওয়ালা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো আছে আমে। স্তন ক্যানসার থেকে শুরু করে কোলন ক্যানসার, প্রোস্টেট ক্যানসার ও লিউকেমিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে এগুলো বেশ কাজের।

কোলেস্টেরল ঠিকঠাক
উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি, ফাইবার ও প্যাকটিন থাকায় রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা রাখে রসালো আম!

ত্বকের জন্য
ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে আম। বিশেষ করে ত্বকের ফুসকুড়ি দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এটি।

অ্যালকালাইন লেভেল
আমে আছে টারটারিক অ্যাসিড ও ম্যালিক অ্যাসিড। আছে সাইট্রিক অ্যাসিডও। শরীরের অ্যালকালি নামের রাসায়নিকের ভারসাম্য ঠিক রাখে এটি।

ওজন কমাতে
আমে এতো এতো ভিটামিন আছে যে একটা আম খেলেই কিন্ত শরীরে রোজকার ভিটামিনের চাহিদা মিটে যাওয়ার কথা। আবার এতে ফাইবারও যোগাবে পুষ্টি ও শক্তি। তাই এই মৌসুমে যারা ওজন কমানোর কথা ভাবছেন তারা বার্গার, কোল্ড ড্রিংকস বা সাব-স্যান্ডউইচের বিকল্প খাবার হিসেবে বেছে নিতে পারেন আম। যারা ওজন কমাতে চান তাদের আম টনিকের মতো কাজ করবে।

লাভ ফ্রুট
আম খাওয়ার উপকারিতা যাই হোক না কেনো এটা কিন্তু লাভ ফ্রুট জানেন তো? ইংরেজিতে কঠিন একটা শব্দ আছে- আফ্রোডিজিয়াক। এর বাংলা হতে পারে এমন, ‘যা খেলে মনে ভালোবাসার উদ্রেক হয়’। আম কিন্তু এমনই একটা ফল। সুতরাং মৌসুম থাকতেই প্রিয়জনকে বেশি বেশি আম উপহার দিন।

চোখের জন্য
এটা তো ছোটবেলা থেকেই পড়ে এসেছেন। আমের ভিটামিন এ আমাদের রাতকানা থেকে বাঁচাবে। যদিও এ রোগ এখন নেই বললেই চলে তবে চোখের স্বাস্থ্যের জন্য বেশি বেশি আম খেলে ক্ষতি নেই। বিশেষ করে ড্রাই আই সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা আম খেয়ে উপকার পেতে পারেন।

হজমের জন্য
স্বাস্থ্য যদি সুখের মূলে থাকে, তবে স্বাস্থ্যের মূলে আছে হজম। আমে থাকা এনজাইমগুলো প্রোটিন উপাদানগুলোকে সহজে ভেঙে ফেলতে পারে। এতে খাবার হজম হয় দ্রুত, বাঁচা যায় পাকস্থলী সংক্রান্ত অনেক রোগ থেকেও।

আম খাওয়ার উপকারিতা Benefits of Mangoes Mango আম
আম সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল

হিট স্ট্রোক ঠেকাবে
এই গরমের হিট স্ট্রোক সাধারণ ঘটনা। আম খাওয়ার অন্যতম উপকার হলো এটা আমাদের ভেতরটা শীতল রাখে ও শরীরকে অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়া থেকে শরীরের ভেতরের অঙ্গগুলোকে বাঁচায়।

রোগ-প্রতিরোধ
এই করোনাকালে আমে থাকা ক্যারোটেনয়েড বাড়িয়ে দেবে আপনার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা। সহযোদ্ধা হিসেবে ভিটামিন সি তো আছেই। এতে প্রায় কমলালেবুর সমান ভিটামিন সি আছে। যেমন কমলালেবু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, তেমন আমও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এজন্য আম খাওয়ার উপকারিতা যারা জানেন তাঁরা মৌসুমি ফল হিসেবে এটা নিয়মিত খান এবং তাঁরা অন্যদের থেকে তুলনামূলক কম অসুখ-বিসুখে ভোগেন।

মনযোগ ও স্মৃতির জন্য
কোনও কিছুর প্রতি মনযোগ ধরে রাখতে কষ্ট হলে উপকার করবে আম। মেমোরি বুস্টার হিসেবেও কাজ করে ফলটি। পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা এটা অন্যতম বলা যায়।

বডি স্ক্রাব
ত্বককেও খাওয়াতে পারেন আমের নির্যাস। বডি স্ক্রাব হিসেবে পাকা আম বেশ ভালো কাজ করে। পেস্ট তৈরি করে তাকে একটুখানি মধু আর দুধ মিশিয়ে নিন। আলতো করে মাসাজ করে ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

কতটা খাবেন?
আম খাওয়ার উপকারিতা তো জানলেন কিন্তু এতো এতো উপকারের কথা শুনে গপাগপ আম গিলতে যাবেন না। এক কাপ আমে আছে ১০০ ক্যালোরি। আর এর ৯০ ভাগই আসে আমে থাকা চিনি থেকে। সুতরাং ডায়াবেটিস রোগীরা আম খাওয়ার আগে পুষ্টিবিদের দেওয়া চার্টটা দেখে নিন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দিনে একটি পাকা আমের অর্ধেকটা খাওয়ারই পরামর্শ দেওয়া হয়।

দেশীয় আমের নাম জানুন:

আমাদের দেশীয় উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হলো:

  • ল্যাংড়া, ক্ষিরসাপাত, গোপালভোগ, ফজলি, আশ্বিনা, বোম্বাই, অগ্নি, অমৃত ভোগ, আলফাজ বোম্বাই, আতাউল আতা, আরিয়াজল, আরাজনমা, আলম শাহী, গিলা, গোলাপবাস, আনারস, ইলশাপেটি, কলাচিনি, কাঁচামিঠা, কালিয়া, কৃষ্ণচূড়া, টিক্কাফারাশ, টিয়াকাঠি, কালাপাহাড়ী, কালিভোগ, কালুয়া, কাঞ্চন খোসাল, কাজলা সিন্দুরি, কিষাণ ভোগ, কোহিনুর, কোহিতুর, কুয়া পাহাড়ি, টোফা, কাজল ফজলি!
  • কাইয়া ডিপি, কাটাসি, গোলাপ খাস, গোলাপ বাস, গোল্লা, গুল্লি, গৌরজিত, গুলগুল্লি, চেপি, চরবসা, চম্পা, চন্দন খোস, চিনি কালাম, চিনি বড়ই, চিনি পাতা, ছাবিয়া, ছানাজুর, ছফেদা, জালী বান্ধা, ভাঙা, জিলাপির ক্যাড়া, জোয়ালা, জিতুভোগ, গোবিন্দভোগ, জর্দা, জর্দালু, ত্রিফলা, বাওয়ানী, বাউনি লতা, তাল পানি, দার ভাঙা, দর্শন, দাদভোগ, দেউরি, দিলসাদ, দোফলা, দিল্লির লাডুয়া, দুধিয়া, দেওভোগ, দুধসর, বড়বাবু, নারিকেলি, নারকেল পাথী, নয়ন ভোগ, প্রসাদ ভোগ।
  • জিতুভোগ, সীতাভোগ, বোগলাগুটি, পাথুরিয়া, ফজলি কালান, ফনিয়া, বারমাসি, বোতল বেকি, বোতলা, বড়শাহী, বাতাসা, বাউই ঝুলি, বিড়া, বেগম পছন্দ, কমল পছন্দ, বেল খাস, বিমলা, বিশ্বনাথ, বোম্বাই কেতুল্লা, বদরুদ্দোজা, বোম্বাই গোপাল ভোগ, বোম্বাই খিরসা, বউ ভুলানী, বৃন্দাবনী, সাহা পছন্দ, বাদশা ভোগ, ভাদুরি, ভবানী, ভবানী চৌরাস, ভারতী, মাল ভোগ, মাংগুড়া পাকা, মিসরীদাগী।
  • মিসরী ভোগ, মিসরী দানা, মিসরী কান্ত, ভূত বোম্বাই, মতিচুর, মোহন ভোগ, মোহন পছন্দ, রাজরানী, রাম প্রসাদ, রানি পছন্দ, কাজী পছন্দ, বিলুপছন্দ, রানি ভোগ, রাজ ভোগ, কালিভোগ, জিবাভোগ, লাক্ষৌ, লাদুয়া, লাডুয়া, লোরাল, লালমুন, লক্ষণ ভোগ, লতা খাট, লতা বোম্বাই, নাবী বোম্বাই, লোহাচুর, শ্যাম লতা, রসবতী, সাটিয়ার ক্যাড়া, সাদাপাড়া, সবজা, সুবা পছন্দ, শাহী পছন্দ, সরিখাস।
  • শরিফ খাস, সিন্দুরি, সারাবাবু, শোভা পছন্দ, সুলতান পছন্দ, সফদরপছন্দ, সূর্যপুরী, সুরমাই ফজলি, হায়াতী, হিমসাগর, খুদি ক্ষিরসাপাত, ক্ষিরপুরি, ক্ষিরমন, ক্ষির টাটটি, ক্ষির বোম্বাই, বেলতা, হাড়িভাঙা, বৈশাখী, গৌড় মতি, হুক্কা, লাড়ুয়ালী, ডালভাঙা, মণ্ডা, মিছরী দমদম, নীলাম্বরী, খান বিলাস, বাতাসা, মনাহারা, পাথুরিয়া, তোহ্ফা, ফোনিয়া, মধুচুষকি, মধুমামি, নকলা, মোহিনিসিন্দুরী, ভুজাহাড়ি, সন্ধ্যাভারুতি, পদ্মমধু, অমৃতভোগ, লতারাজ, বৃন্দাবনি ইত্যাদি।