Bangladesh Awami league & BNP Logo - আওয়ামী লীগ ও বিএনপি লোগো

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচন আপডেট

রাজনীতি

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন আগামী ২১ জুন। গত ৩ এপ্রিল ঢাকায় নির্বাচন কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। এই নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে তৎপর আওয়ামী লীগ। এখন পর্যন্ত বর্তমান মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ছাড়া অন্য কাউকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ভাবছেন না আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারপরও বিকল্প মেয়র প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। 

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ঘিরে সরগরম রাজশাহীর রাজনীতি

আগামী ২১ জুন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে মূলত লড়াই হয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে।

তবে এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের নির্বাচনি মাঠে তৎপরতা দেখা যায়নি। ফলে কাউন্সিলর পদে এবার ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে মোকাবিলা করতে হবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী যারা

প্রকাশ্যে না হলেও ভেতরে ভেতরে মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি মূলত দুই ধারায় বিভক্ত। মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ২০২১ সালের নভেম্বরে তাকে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয়। এরপর তিনি নগর সভাপতির পদ ছেড়ে দেন।

গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের পর লিটনকে আবার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয়।

এরপর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়, মেয়র না হয়ে এবার হয়তো সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন লিটন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে লিটনকে হয়তো মন্ত্রী করা হবে। 

আগে থেকেই মেয়র পদে আলোচনায় আসে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের নাম। দলের মনোনয়ন পেতে ভেতরে ভেতরে তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তবে সম্প্রতি ডাবলু সরকারের একটি ‘আপত্তিকর ভিডিও’ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। রাজনৈতিক অঙ্গনে ওঠে নিন্দার ঝড়। দল থেকে ডাবলু সরকারের বহিষ্কারের দাবিতে মাঠে কয়েক দিন আন্দোলনও হয়। ফলে দলীয় পদ রক্ষাই তার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দলের অনেকে মনে করছেন। যদিও ওই ভিডিওটি ‘এডিটেড’ বলে দাবি ডাবলুর।

এ নিয়ে সমালোচনা জোরেশোরে ওঠার পর ডাবলু বলেন, নগর পিতা হওয়ার স্বপ্ন আমারও ছিল। কিন্তু মাসখানেক আগে নোংরা রাজনীতির কারণে সেই স্বপ্ন আর নেই। আমার মন ভেঙে গেছে। এখন দল চাইলে প্রার্থী হব। না চাইলে নির্বাচন করব না।

কেবল লিটন নির্বাচন না করলেই প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমার কথা স্পষ্ট। খায়রুজ্জামান লিটন যোগ্য প্রার্থী। তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি যদি প্রার্থী না হন, তা হলে আমি ভোট করব।

আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন কি না-এমন প্রশ্নে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, নেত্রী চাইলে আবারও প্রার্থী হবনগরবাসী চাইলে তাদের সেবা করব। লিটন প্রার্থী না হলে আসাদুজ্জামান প্রার্থী হবেন-এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনার কাছ থেকেই বিষয়টি শুনলাম। নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’

আওয়ামী লীগের সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি কেমন-জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, আমাদের প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন। নেত্রী তাকেই প্রার্থী করবেন বলে আমাদের ধারণা। আমরা তাকে পাস করিয়ে আনব, এটিই আমাদের লক্ষ্য।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী যারা

রাজশাহী সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর ১৯৯১ সালের ২১ মে নাগরিকদের সরাসরি ভোটে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনু। এরপর ১৯৯৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত একটানা মেয়র ছিলেন তিনি। পরে দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে তিনি আর মেয়র পদে নির্বাচন করেননি।

এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে পরাজিত করে মেয়র হন শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সন্তান এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

এরপর ২০১৩ সালের নির্বাচনে বুলবুলের কাছেই পরাজিত হন লিটন। পরে ২০১৮ সালে সেই বুলবুলকে হারিয়ে ফের মেয়র হন লিটন।

আগামী নির্বাচন নিয়ে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পরিকল্পনা জানা যায়নি। ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে কথা হয় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈসার সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘আমরা তো এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই অংশ নিতে চাই না। এখন পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তই আছে। সিটি নির্বাচন নিয়ে দলীয় ফোরামে নতুন কোনো আলোচনাও হয়নি।’

বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে প্রার্থী কে হবেন-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সে রকম কিছু হলে দলের হাইকমান্ড যা সিদ্ধান্ত দেবে, সেভাবেই আমরা কাজ করব।’

তবে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় তবে দল থেকে এবারও মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হবেন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।

দল থেকে এখন পর্যন্ত সিটি নির্বাচন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও বিএনপির কয়েকজন নেতা সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের প্রচার-প্রচারণাও চলছে।

তারা হলেন-রাজশাহী মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন রিমন।

বর্তমানে মহানগর বিএনপির কমিটি না থাকায় তারা কোনো পদে নেই। তবে কমিটি হলেই বিএনপির মূল দলের কমিটিতে পদ পেতে পারেন বলে বলছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী যারা

গত ২৫ মার্চ দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা শাহাবুদ্দিন বাচ্চুকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন দলটির জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন।

শাহাবুদ্দিন বাচ্চু রাজশাহী মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিয়ে থাকেন সেখানে। শাহাবুদ্দিন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের রাজনৈতিক উপদেষ্টাও। তবে তার সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থিতা ঘোষণাকে ‘প্রতারণা’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির রাজশাহী মহানগরের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম।

সাইফুল জাতীয় পার্টির জিএম কাদেরপন্থি অংশের ভাইস চেয়ারম্যান। দলের কেন্দ্রীয় ও রাজশাহীর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে বলে দাবি তার।

তিনি বলেন, আমরা এমন সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছি। শাহাবুদ্দিন জাতীয় পার্টির কেউ নন। তিনি দল ছেড়ে বিদেশে গেছেন। পরে রওশন এরশাদপন্থি হয়েছেন। এখন রওশন এরশাদ আর জিএম কাদের তো এক। যদি কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দিয়ে থাকে, তা হলে ঠিক আছে; আমরা তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। কিন্তু কেন্দ্র বা রাজশাহীর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এক ধরনের প্রতারণা।

গত ৩ এপ্রিল ঢাকায় নির্বাচন কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী ২১ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুনঃ গরম বাড়বে রাজশাহী ও যশোর অঞ্চলে

সভা শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। তিনি জানান, ৫ সিটির নির্বাচনে ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা থাকবে। ভোটগ্রহণের হালনাগাদ তথ্য কর্মকর্তারা ট্যাবের মাধ্যমে কমিশনকে জানাবে।

তিনি আরও জানান, সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। সব সিটি নির্বাচনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন শেষ করা হবে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন (রাসিক) ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। বাছাই ২৫ মে ও ১ জুনের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে।