রাজশাহীতে ছাত্রলীগ নেতা শাহীন হত্যা মামলায় ৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। এ মামলায় আরও ২২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ও এইচ এম ইলিয়াস হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে রায়ের দিন নির্ধারিত থাকলেও ১২ বার পেছানোর পর বৃহস্পতিবার রাজশাহীর চাঞ্চল্যকর এই মামলায় রায় ঘোষণা করা হলো।
নিহত শাহেন শাহ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ ও এক নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজব আলীর ছোট ভাই। ২০১৩ সালের ২৮ আগস্ট দুপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন শাহেন শাহ।
শিক্ষানবিশ আইনজীবী শাহেন শাহ রাজশাহী কোর্ট কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাকে হত্যার ঘটনায় তার ভাই মহানগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আক্তার নাহান বাদী হয়ে পরদিন নগরীর রাজপাড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজপাড়া থানার এসআই মনিরুজ্জামান সিটি করপোরেশনের তৎকালীন ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনসুর রহমানসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন আসামিরা হলেন- সিটি করপোরেশনের এক নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর গোবিন্দপুর পূর্ব রায়পাড়া এলাকার মৃত মেহের চানের ছেলে মনসুর রহমান (৪৫), মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে হাসানুজ্জামান হিমেল (৩৮) ও তৌফিকুল ইসলাম চাঁদ (৪৫), গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মো. মহাসীন (৫০), মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে মো. সাইরুল (২৬), নুহু শেখের ছেলে মো. রজব, মৃত আক্কাস আলীর ছেলে বিপ্লব, গোলসের কশাইয়ের ছেলে মো. মমিন ও আব্দুস সালামের ছেলে আরিফুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের এক নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন নিহত শাহেন শাহের বড় ভাই রজব আলী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন বিএনপি নেতা মনসুর রহমান। নির্বাচনে মনসুর রহমান নির্বাচিত হন। নির্বাচন চলাকালে মনসুর রহমান আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে রজব আলীর ভাই শাহেন শাহ নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেন।
বিষয়টিকে কেন্দ্র করে মনসুর রহমান ঘোষণা দেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার সাধ নির্বাচনের পরই মেটানো হবে। এর জের ধরে ২০১৩ সালের ২৭ আগস্ট মনসুর ও তার সমর্থকেরা রজব আলীর মালিকানাধীন রজব অ্যান্ড ব্রাদার্স এর গুদাম ঘর ও ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর করেন। এছাড়া শহীদ কামারুজ্জামান স্মৃতি সংঘ ভাঙচুর করে তাদের বাড়িতে আক্রমণ করা হয়।
রজবসহ তার ভাইদের খুঁজে না পেয়ে হামলাকারীরা ঘোষণা দেন তাদের যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই হত্যা করা হবে। পর দিন ২৮ আগস্ট গুড়িপাড়া সাকিনের ক্লাব মোড়ে শাহেন শাহকে পেয়ে আসামিরা তাকে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। তার কাছে থাকা মোটরসাইকেলটিও ভাঙচুর করা হয়। এরপর পিস্তলের ফাকা গুলি করতে করতে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
পরে খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা শাহেন শাহকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ নিয়ে নিহতের ভাই নাহিদ আক্তার নাহান বাদী হয়ে ২৯ আগস্ট নগরীর রাজপাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।