গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে আজীবন বহিস্কারের পর এক সপ্তাহের ব্যবধানে তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত নয় দিন আগেও দাপুটে এ নেতার অনুসারীরা গাজীপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে ছিলেন সরগরম। কিন্তু আজ তারা জাহাঙ্গীর বিরোধীদের চাপের মুখে হয়ে পড়ছেন কোণঠাসা।
বিভিন্ন স্থানে অনেককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। অনেকের ঘর-বাড়ি ভাংচুর করা হচ্ছে। বেশ কয়েক জন রয়েছেন আত্মগোপনে। জাহাঙ্গীরের সমর্থকদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অংঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতা কর্মীদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিয়ে হেয় করা হচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে গাজীপুর মহানগরীর জোলারপাড় এলাকায় কাউলতিয়া সাংগঠনিক থানা যুবলীগের নেতা মতিউর রহমান মতিনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে কম্পিউটার, ল্যাপটব, আলমারি, শোকেসসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে জাহাঙ্গীর বিরোধীরা।
তার বাড়িতে একদল লোক গিয়ে তাকে খোঁজ করে না পেয়ে এ হামলা চালায়। হামলাকারীরা তাকে এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়।
একইদিন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব আবুল হোসেনকে টঙ্গীর মধুমিতা মেগা সিটির সামনে ঘিরে ধরে মারধর করা হয়েছে। প্রথমে মান-সম্মানের ভয়ে কাউকে কিছু জানালেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মারধরের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর জানাজানি হয়।
জাহাঙ্গীরের সমর্থক আওয়ামী লীগের সহযোগী এক সংগঠনের নেতা আব্দুল আলিম তার ফেসবুক আইডিতে গাজীপুর-২ আসনের এমপি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এর ছবি দিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
সেখানে তিনি লিখেন “আমরা আওয়ামী লীগের কর্মী বিধায় জাহাঙ্গীর আলম যতদিন দলের পদে ছিল ততদিন তার অনুসারী ছিলাম। তার জন্য যদি কোন শাস্তি দেন মাথা পেতে নিব। আর যদি ক্ষমা করে দেন তাহলে চীর কৃতজ্ঞ থাকব”।
ওই স্ট্যাটাসেও জাহাঙ্গীর বিরোধীরা করছেন তিরস্কারমূলক কমেন্টস। এছাড়াও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কয়েকজন নির্বাচিত কাউন্সিলর যারা কিনা সার্বক্ষণিক জাহাঙ্গীরের সাথে থাকতেন। তাদেরকে নিয়ে বিভিন্ন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখানো হচ্ছে।
কয়েকজন কাউন্সিলদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখানোর বিষয়ে ২৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জবেদ আলী জবে বলেন, যার যার কর্মের ফল সে সে ভোগ করবে।
জাহাঙ্গীরের সাথে জামাত বিএনপি’রসহ বেশ কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলররা থাকতো। তাদেরকে সে সব সময় মূল্যায়ন করতো। মেয়র থাকা অবস্থায় জাহাঙ্গীরের কাছে অনেক আওয়ামী লীগের কাউন্সিলররাও মূল্যায়িত হত না।
নিয়ম হচ্ছে কাউন্সিলরা কাউন্সিলের মত থাকবে যার যার ওয়ার্ডে কাজ করবে। মেয়রের সাথে যদি কোন প্রয়োজন হয় মাসিক মিটিংসহ বিভিন্ন সময়ে কথা হবে।
কিন্তু কিছু কিছু কাউন্সিলর সার্বক্ষণিক তার সাথেই থাকতো। তাদের কারণে অন্যকেউ জাহাঙ্গীরের কাছে যেতে পারতো না। এরকম বিষয় বাংলাদেশের কোথায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। এটা অনেকেই ভালো চোখে দেখতেন না। এসব কারণে হয়তো তাদের নিয়ে কেউ কেউ বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। তবে এটাও ঠিক নয়।
এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আফজাল হোসেন সরকার রিপন বলেন, কোণঠাসা বিষয়টিতো বর্তমানে স্বাভাবিক।
কারণ জাহাঙ্গীর আলমকে শোকজ এবং বহিস্কার করার পরেও যারা তার সাথে ছিলো তাদের প্রতি অনেকেরই ক্ষোভ থাকতে পারে।
এছাড়া সংগঠনও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হয়তো বা নিবেন। তবে আমরা সবাই মিলেই দলকে সু-সংগঠিত করে যে কোন লড়াই সংগ্রামে প্রস্তুত থাকবো। এবং আগের চেয়ে আরো বেশি শক্তিশালী হবো।
এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে বহিস্কারের পর ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডলকে কেন্দ্র থেকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
খুব শিগগিরই গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের একটি মিটিংয়ের আয়োজন করা হবে। ওই মিটিংয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে যে সমস্যা গুলো রয়েছে তার সমাধান করে ফেলবো।