করোনাকালে গরিবের জন্য খাদ্য ও অর্থসহায়তা আছে। উচ্চবিত্তের জন্য আছে শিল্পের প্রণোদনা। কিন্তু মধ্যবিত্তের জন্য কী আছে একবারও কি ভেবে দেখেছেন?
গবেষকরা মধ্যবিত্তের একটা চেহারা দাঁড় করিয়েছেন আয় অথবা ক্রয় ক্ষমতা দিয়ে৷ কিন্তু বাংলাদেশে এই করোনায় শহরের মধ্যবিত্ত চেনা যাচ্ছে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার মধ্য দিয়ে৷ কারণ, মধ্যবিত্ত ত্রাণের লাইনে দাঁড়াতে পারেন না৷ অভাবের কথা মুখ ফুটে বলতেও পারেন না৷ মধ্যবিত্তের অবস্থান মাঝখানে৷ তাই না পারে নীচে নামতে, না পারে উপরে উঠতে৷ এই করোনাকালে তাই সে হাঁসফাঁস করছে মধ্যবিত্ত৷
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বলছে, এক ব্যক্তির ক্রয় ক্ষমতা (পিপিপি) যদি প্রতিদিন দুই মার্কিন ডলার থেকে ২০ মার্কিন ডলারের মধ্যে হয় তাহলে তাকে মধ্যবিত্ত বলা যায়৷ এই হিসেবে তারা বলছে, বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত হলো তিন কোটি ৭ লাখ৷ বিশ্বব্যাংকের মধ্যবিত্তের আয়ের হিসেবটি একটু বেশি৷ যাদের প্রতিদিন আয় ১০ থেকে ৫০ ডলার, তারা মধ্যবিত্ত৷তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দুই থেকে চার ডলার প্রতিদিনের আয় হলেই মধ্যবিত্ত৷
সেই হিসেবে যার মাসিক আয় ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা সেই মধ্যবিত্ত৷ এটা বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৩০ ভাগ৷ ১৬ কোটি মানুষের হিসেবে সংখ্যাটি দাঁড়ায় চার কোটি ৮০ লাখ৷ বিআইডিএস-এর সাম্প্রতিক জরিপে বলা হচ্ছে, করোনায় এক কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে গরিব হয়েছে, দারিদ্র্য সীমার নীচে নেমে গেছে৷ তাই এখন দেশে গরিব মানুষের সংখ্যা পাঁচ কোটির বেশি৷
এই যে নতুন করে তারা কেন দরীদ্র হলেন? হঠাৎ এই প্রশ্নের জবাব দেয়া কঠিন৷ দারিদ্র্য সীমার একটু উপরে একটি বড় জনগোষ্ঠী আছে৷ তারা যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে দরিদ্র হয়ে যান৷ আবার পরে পরিস্থিতি কটিয়ে ওঠেন৷ বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি সংকটের মুখে আছেন নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো৷ তারাই হয়তো দরিদ্রের কাতারে নেমে গেছেন৷
কিন্তু যারা মধ্যবিত্ত, তারা এখনো টিকে আছেন৷ তাদের সংখ্যা হয়তো ঠিকই থাকবে৷ হয়তো ব্যক্তির পরিবর্তন হবে৷ কারণ, নতুন পরিস্থিতিতে পেশার পরিবর্তন হবে৷ নতুন ধরনের ব্যবসা আসবে, কাজ আসবে৷ কেউ ভালো অবস্থায় যাবেন৷ আবার কেউ খারাপ অবস্থায় পড়বেন!
গবেষণার এক জরিপে দেখা গেছে, করোনায় ফর্মাল সেক্টরে কাজ করা ১৩ শতাংশ মানুষ চাকরি হরিয়েছেন৷যাদের আয় ১১ হাজার টাকার কম তাদের ৫৬.৮৯ শতাংশ পরিবারের আয় বন্ধ হয়ে গেছে, ৩২.১২ শতাংশের আয় কমে গেছে৷ যাদের আয় ১৫ হাজার টাকার মধ্যে তাদের ২৩.২ শতাংশের আয় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে৷ ৪৭.২৬ শতাংশের আয় কমে গেছে৷ আর যাদের আয় ৩০ হাজার টাকার বেশি তাদের ৩৯.৪ শতাংশের কমেছে এবং ৬.৪৬ শতাংশের আয় বন্ধ হয়ে গেছে৷ এই জরিপে কিন্তু মধ্যবিত্তের ওপর করোনার অভিঘাত স্পষ্ট৷
উচ্চবিত্তদের প্রতি একটাই অনুরোধ,সমাজের এই মধ্যবত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের হেয় প্রতিপন্ন না করার,তারা আপনাদের মতোই রক্ত মাংসে গড়া মানুষ।সংকটাপন্ন সময়ে তাদের পাশে এসে দাড়ানো এবং সৌজন্যমূলক ব্যবহার করা। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এমন একটা অবস্থায় থাকে,”না পারে কিছু বলতে,না পারে কিছু সইতে”।
মোঃ রাজু হোসাইন
শিক্ষার্থী, ফার্মেসী বিভাগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ