Dhaka University - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় - DU

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন এবং প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়

ক্যাম্পাস শিক্ষা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অন্যতম, সবচেয়ে প্রাচীন এবং প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। এটা বাংলাদেশের এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেটা বাংলাদেশের সকল ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে। ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ সবকিছুর নাম তুললেই উঠে আসে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য।

১৯১১ সালে ২৯শে আগস্ট ঢাকার কার্জন হলে ল্যান্সলট হোয়ারের বিদায় এবং চার্লস বেইলির যোগদান উপলক্ষ্যে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৃথক দুটি মানপত্রে নবাব সলিমুল্লাহ এবং নওয়াব আলী চৌধুরী সর্বপ্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী জানান।

১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর ‘বঙ্গভঙ্গ রদ’ ঘোষণার পরে তৎকালীন গভর্ণর লর্ড হার্ডিন্জ জানুয়ারীতে (১৯ শে জানুয়ারী,১৯১২) তিন দিনের সফরে ঢাকা আসেন এবং তাঁর সাথে দেখা করতে যান ১৯ জনের প্রতিনিধিদল- যাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী এবং শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। তাঁরা বঙ্গভঙ্গ (যে প্রদেশটি কার্যকর হয়েছিল ঢাকাকে রাজধানী করে বাংলা ও আসাম প্রদেশ নিয়ে ১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর) প্রদেশটি পুনরায় চালুর আহ্বান জানান, নতুবা ঢাকায় ন্যূনতম একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার দাবী জানান।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য নাথান কমিশন গঠিত হয়েছিল যার সদস্য সংখ্যা ছিল ১৪ এবং পরবর্তীতে বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়।

১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে আর্থিক সংকটের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ চাপা পড়ে যায়। সে সময় নওয়াব আলী চৌধুরী ইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। ১৯১৫ সালে নবাব সলিমুল্লাহর মৃত্যুর পর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য শক্তভাবে হাল ধরেন। ১৯১৭ সালের ৭ মার্চ ইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সভায় তিনি বিষয়টিকে আবার উপস্থাপন করেন।

অবশেষে, ১৯২০ সালের ১৮ মার্চ ভারতীয় আইনসভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল অ্যাক্টে পরিণত হয় এবং ২৩ মার্চ তা গভর্নর জেনারেলের অনুমোদন লাভ করে। লর্ড হার্ডিঞ্জ কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার নয় বছর পর ১৯২১ সালের জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে যথারীতি ক্লাস শুরু হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন কিছু তথ্য:

  • * ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তারিখ: ১লা জুলাই, ১৯২১ ইং।
  • * প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষকের সংখ্যা: ৬০ জন
  • * প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষার্থীর সংখ্যা: ৮৭৭ জন
  • * প্রতিষ্ঠাকালীন বিভাগের সংখ্যা: ১২ টি
  • * প্রতিষ্ঠাকালীন অনুষদের সংখ্যা: ৩ টি
  • * প্রথম ভিসি : পি জে হার্টস
  • * প্রথম মহিলা শিক্ষিকা: করুণাকণা গুপ্তা ( ইতিহাস বিভাগ)
  • * প্রথম মহিলা শিক্ষার্থী: লীলা নাগ
  • * প্রথম উপমহাদেশীয় ভিসি: স্যার এ. এফ. রহমান।

প্রতিষ্ঠা লগ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জমির পরিমাণ ছিলো ৬০০ একর। কথিত রয়েছে নবাব সলিমুল্লাহ এই জমি দান করেন। অন্যসূত্রে বলা হয়েছে, সরকারী খাস জমিতে স্থাপিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যার পেছনে অবদান রয়েছে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলীর যিনি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন ( অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলিম মন্ত্রী)।

১৯২২ সালে তিনি ছাত্র ছাত্রীদের বৃত্তি বাবদ ১৬ হাজার টাকার একটি তহবিল প্রদান করেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে অর্থাভাব দেখা গেলে নিজ জমিদারীর একাংশ বন্ধক রেখে এককালীন ৩৫,০০০ টাকা প্রদান করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ১৩ টি অনুষদ, ৬৭ টি বিভাগ, ৮ টি ইনস্টিটিউট, ৩০ টি ব্যুরো এবং গবেষণা কেন্দ্র, ১৬৯৩ জন শিক্ষক, প্রায় ৩২৫৪০ জন শিক্ষার্থী এবং ১৭টি আবাসিক হল এবং তিনটি হোস্টেল রয়েছে। বর্তমান ফ্যাকাল্টি সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশ ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিধারী। তাদের অনেকেই তাদের বৃত্তির জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে। বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুপরিচিত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাও রয়েছে অনেকের।

ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন।

প্রাথমিকভাবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কৃতিত্বের একটি অসামান্য রেকর্ড গড়ে তোলার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন, নিজের জন্য ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ হওয়ার খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি এমন এক প্রজন্মের নেতাদের উত্থানে অবদান রেখেছিল যারা জীবনের বিভিন্ন স্তর থেকে নিজেদের আলাদা করেছিল।

১৯৪৭ সালে বঙ্গভঙ্গের আগ পর্যন্ত, এটি এশিয়ার উচ্চ শিক্ষার কয়েকটি আবাসিক প্রতিষ্ঠানের একটি হওয়ার অনন্য বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেছিল। ১৯৪৭ সালে, এটি পূর্ব বাংলার মধ্যে পড়া মাধ্যমিক স্তরের উপরে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর একাডেমিক কর্তৃত্ব গ্রহণ করে। প্রক্রিয়ায়, এটি একটি শিক্ষাদান-কাম-অনুষঙ্গী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এই রূপান্তর, পরবর্তী বছরগুলিতে এর অভূতপূর্ব বৃদ্ধির সাথে মিলিত হয়ে, এর মানুষের এবং সেইসাথে বস্তুগত সম্পদের উপর চাপ সৃষ্টি করে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এসময় বিপুল সংখ্যক বিশিষ্ট শিক্ষক এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্র ও কর্মচারী প্রাণও হারান।

নিহত শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন ডঃ জিসি দেব (দর্শন বিভাগ), ডাঃ এএনএম মুনিরুজ্জামান (পরিসংখ্যান বিভাগ), সন্তোষ সি ভট্টাচার্য (ইতিহাস বিভাগ), ডাঃ জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা (ইংরেজি বিভাগ), এ এন মুনীর। চৌধুরী (বাংলা বিভাগ), মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (বাংলা বিভাগ), ড. আবুল খায়ের (ইতিহাস বিভাগ), ড. সিরাজুল হক খান (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট), রশিদুল হাসান (ইংরেজি বিভাগ), আনোয়ার পাশা (ইতিহাস বিভাগ)।

ড. ফজলুর রহমান (মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ), গিয়াসউদ্দিন আহমেদ (ইতিহাস বিভাগ), ড. ফয়জুল মহি (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট), আব্দুল মুক্তাদির (ভূতত্ত্ব বিভাগ), সরাফত আলী (গণিত বিভাগ)। ), সাদাত আলী (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট), আতাউর রহমান খান খাদিম (গণিত বিভাগ), এবং অনুদায়পায়ন ভট্টাচার্য (পদার্থবিদ্যা বিভাগ)। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মর্তুজা এবং ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মদ সাদেকও নিহত হন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ব র‍্যাংকিং এ এখনো বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে প্রথম হওয়ার কৃতিত্ব ধরে রাখতে পেরেছে।

আরও পড়ুনঃ বিশ্বসেরা তালিকায় দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

1 thought on “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন এবং প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়

Comments are closed.