পানির উপর শুয়ে শুয়ে ল্যাপটপে মুভি দেখবো। মুভি দেখতে বিরক্তি লাগলে হুয়ায়ূন আহমেদ এর রোম্যান্টিক উপন্যাস পড়বো। ভাবা যায়? ‘ডেড সি’ নাম শুনলেই গা কেমন ছমছম করে ওঠে। মনে হয়, মৃত লোকদের এক সাগর, যেখানে ভাসছে লাশ।
কিন্তু আসলে ডেড সি তে মোটেও লাশ ভাসে না। বরং আমার পানির উপর শুয়ে শুয়ে বই পড়া কিংবা মুভি দেখার স্বপ্ন একমাত্র ডেড সি তেই সম্ভব। এমনকি ডেড সি তে আপনি আপনার ২ বছর বয়সী আদুরী বাচ্চাটাকেও নিশ্চিন্তে ছেড়ে দিতে পারবেন। উহু….ভয়ের কোনো কারণ নেই। সে ডুববে না।
এখন প্রশ্ন কেনো ডুববে না?
ক্লাস নাইনে ফিজিক্স বইয়ের পাতায় যেদিন আর্কিমিডিস এর সূত্র পড়ছিলাম, সেদিনই জানতে পারলাম…”মৃত সাগরে (ডেড সি) মানুষ ডুবে না।” এখন চলুন জেনে নেই… কেনো ই বা একে মৃত সাগর বলা হয়! আর কেনো ই বা এখানে মানুষ ডুবে যায় না।
ইতিহাসখ্যাত ‘মৃত সাগর’। ইংরেজিতে বলা হয় ‘ডেড সি’ (Dead Sea) এবং আরবদের কাছে তা ‘বাহরুল মায়্যিত’ নামে পরিচিত! নামের সাথে সাগর যুক্ত থাকলেও এটি প্রকৃতপক্ষে কোনো সাগর নয় এটি একটি হ্রদ।
বিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় ২০ লাখ বছর আগে এ সাগরের উৎপত্তি যেটি জর্দান নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। ডেড সি বা মৃত সাগরের দৈর্ঘ্য ৬৭ কিলোমিটার, প্রস্থ ১৮ কিলোমিটার আর গভীরতা ১.২৪০ ফুট।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪২২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এ সাগরের পশ্চিমে রয়েছে ইসরায়েল ও পূর্বে জর্দান। এখান থেকে পবিত্র জেরুজালেম নগরীর দূরত্ব মাত্র ১৫ মাইল। মৃত সাগর নানা বিচিত্র খনিজ পদার্থে ভরপুর। এতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, সালফার, ব্রোমাইন ও কলগেন রয়েছে।
মৃত সাগরের পানিতে ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড (MgCl2) ও সোডিয়াম ক্লোরাইডের (NaCl) পরিমাণ যথাক্রমে ৫০.৮ ও ৩০.৪ শতাংশ। এ সাগরের পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ৩৩.৭ শতাংশ। এসব লবণ মিশ্রিত থাকার কারণেই এই ডেড সি এর ঘনত্ব অনেক বেশি। আর ঠিক এই কারণেই এখানে মানুষ ডুবে না। আর ডুবে যাবার ভয় নেই বলেই আমার পানিতে শুয়ে বই পড়ার শখটাও মিটতে পারে।
যাইহোক, পৃথিবীর অন্যান্য সাগর ও মহাসাগরের তুলনায় লবণাক্ততা বেশি হওয়ায় মৃত সাগরে কোনো মাছ জন্মায় না। জর্দান নদী থেকে মাছ এই নদীতে আসার সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়। তবে আশ্চর্যজনকভাবে রয়েছে বিপুল ব্যাকটেরিয়া (Microbe) এবং ক্ষুদ্রকায় ছত্রাক (Encyclopadia Encarta, Chapter-Dead Sea)।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী সমকামিতার মতো জঘন্য পাপ ও অপরাধে লিপ্ত হওয়ার কারণে সডম ও গোমাররাহ নামের লোকালয় মহান আল্লাহর হুকুমে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধ্বংস হয়ে যায়।
ঘটনাটি আজ থেকে প্রায় ছয় হাজার বছর আগের। ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থানটি বর্তমানে মৃত সাগর নামে পরিচিত। আল্লাহর নবী হজরত লুত (আ.)-এর বারবার সাবধান বাণী সত্ত্বেও সে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী অবৈধ যৌন সম্পর্ক ও সমকামিতার অভ্যাস পরিত্যাগ করেনি।
পৃথিবীর বুকে একমাত্র তারাই যৌন ক্ষুধা চরিতার্থের উদ্দেশ্যে মহিলাদের বাদ দিয়ে পুরুষদের ওপর উপগত হতো। কোরআনুল কারিমে অত্যন্ত চমৎকারভাবে এই ঘটনা বিধৃত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি লুতকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমরা এমন কুকর্ম করছ, যা তোমাদের আগে বিশ্বে কেউ করেনি। তোমরা তো কামতৃপ্তির জন্য নারী ছেড়ে পুরুষের কাছে গমন করো, তোমরা সীমা লঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৮০-৮১)
ফলে শাস্তি হিসেবে আল্লাহ তাআলা এ জনপদের চার লাখ মানুষকে বাস্তুভিটাসহ বিধ্বস্ত করে দেন। বর্তমান বিশ্বের খ্যাতনামা ইসলামী স্কলার মুফতি তাকি উসমানি মৃত সাগর পরিদর্শনের পর লেখেন, ‘আমেরিকার বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের তলদেশে খননকার্য চালিয়ে মানুষের ব্যবহার্য পাথরের ঘটি, বাটি, চামচ উদ্ধার করেন।
বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত পর্যটক প্রতিদিন মৃত সাগর দেখার জন্য আসে এবং শিক্ষা গ্রহণ না করে বিনোদন ও ফুর্তিতে মেতে ওঠে।’ (মুফতি তাকি উসমানি, জাহানে দিদাহ, মৃত সাগর অধ্যায়)
যাইহোক, ডেড সি নিয়ে আমার বহুত স্বপ্ন। জানিনা কখনো সেখানে ভ্রমণের সুযোগ হবে কিনা।
লেখকঃ তানভীরা অনু
শিক্ষার্থী, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশেষ ঘোষণা:
আপনার লেখা কলাম, ছোটগল্প, জীবনের না বলা গল্প অথবা উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প শেয়ার করুন সবার সাথে। পত্রিকায় প্রকাশের জন্য যোগাযোগ করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে!