ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারের তালিকা স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। ডায়াবেটিস হলো একপ্রকার দীর্ঘমেয়াদি রোগ। তাই চিকিৎসকরা ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়মমাফিক জীবনযাপন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ খাদ্যাভ্যাস। ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিভিন্ন ধরনের খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাবারের পাশাপাশি পানীয়ের দিকেও বিশেষ নজর দিতে বলা হয়।
ডায়াবেটিস রোগীদের বিশেষ ডায়েট চার্ট অর্থাৎ খাবারের তালিকা, যা স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারী হতে পারে
ছাতুর শরবত
প্রাকৃতিক শক্তিবর্ধক পানীয়গুলোর মধ্যে অন্যতম ছাতুর শরবত। এটি মূলত ছোলা থেকে তৈরি হয়। ছোলার ছাতুতে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট থাকে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রায় কোনো ব্যাঘাত ঘটায় না বরং তাৎক্ষণিকভাবে শক্তি যোগায়। এ ছাড়াও দীর্ঘসময় সময় পর্যন্ত পেট ভরা রাখতেও সাহায্য করে ছাতু। ছাতুর শরবত তৈরি করতে প্রথমে এক গ্লাস পানিতে ছাতু ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর তাতে পরিমাণমতো বিট লবণ, পেঁয়াজ কুচি এবং লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।
তোকমা দানা
ফালুদার অন্যতম উপকরণ হলো তোকমা দানা। উচ্চ পিএইচ যুক্ত এই দানা অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর, বেশ জনপ্রিয়। তা ছাড়া ফাইবার সমৃদ্ধ তোকমা দানা ওজন কমানো এবং রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সহায়তা করে।
তোকমা দানার শরবত তৈরি করতে প্রথমে এক চা চামচ দানা নিয়ে ভালো করে ধুয়ে পানিতে দিয়ে দিন। হালকা ঝাঁকিয়ে নিন। এই পানীয়টিতে মিষ্টি স্বাদ চাইলে খাঁটি মধু বা গুড় ব্যবহার করতে পারেন।
ভেজিটেবল জুস
বেশিরভাগ ফলের রসে অধিক চিনি মেশানো হয়, তাই আপনি মিক্সড ভেজিটেবিল জুস বানিয়ে খেতে পারেন। কিছু সবুজ শাকসবজি ও এক মুঠো বেরি নিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। এই মিশ্রণটি আপনাকে প্রচুর ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করবে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
চিনি ছাড়া কফি
গবেষণায় দেখা গেছে যে, কফি পান করলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে। যারা প্রতিদিন দুই-তিন কাপ কফি খান, তাদের ঝুঁকি
অনেকটা কমে। তবে অবশ্যই চিনি ছাড়া কফি খাওয়া উচিত। চিনি এবং ক্রিম যোগ করলে ক্যালরির মাত্রা বাড়তে পারে, যা আপনার রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই ব্ল্যাক কফিই সবচেয়ে সেরা।
বেশি বেশি পানি পান
ডায়াবেটিস রোগীদের প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত। কারণ এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াবে না। হাই ব্লাড সুগার লেভেল ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত গ্লুকোজ দূর হতে পারে।
ডায়াবেটিস হলে খাদ্যতালিকা থেকে যেসব ফল বাদ দেবেন
আনারস
মিষ্টি-রসালো আনারস দেখলে অনেকের জিভে পানি আসে! তবে আনারসে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে! ডায়াবেটিস রোগীরা অতিরিক্ত আনারস খেলে তা ব্লাড সুগার লেভেলের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আনারস বেশি না খাওয়াই উত্তম।
আম
এই সময় আমের সিজন না হলেও অনেকে ফ্রিজে রেখে পাকা আম খান। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের মনে রাখতে হবে, আমে চিনির পরিমাণ উচ্চ থাকে। ১০০ গ্রাম আমে প্রায় ১৪ গ্রাম চিনি থাকে, যা রক্তে শর্করার ভারসাম্যকে আরও খারাপ করতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এই ফল এড়িয়ে চলাই ভালো।
কলা
কলাতে কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে এবং কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এই ফলটি খুব একটা উপকারি নয়। তবে মাঝেমধ্যে অল্প কলা খাওয়া যেতেই পারে।
আঙুর
আঙুরে ফাইবার, ভিটামিন এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদানের পাশাপাশি শর্করার পরিমাণও বেশ ভালো থাকে। ৮৫ গ্রাম আঙুরে প্রায় ১৫ গ্রাম পর্যন্ত কার্বোহাইড্রেট থাকতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এটি এড়িয়ে চলাই ভালো।
সফেদা
প্রতি ১০০ গ্রাম সফেদায় প্রায় ৭ গ্রাম শর্করা
থাকতে পারে। এতে কার্বোহাইড্রেট এবং শর্করাও উচ্চ পরিমাণে থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ক্ষতিকারক হতে পারে।