FB IMG 1595347507426

কিশোরগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক জায়গা ভ্রমণ

ভ্রমণ

কিশোরগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক সব জায়গা যারা ভ্রমণ করতে চান তাদের জন্য এই লেখাটা। মুসলিম ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এক জনপদের নাম কিশোরগঞ্জ। একে ঘিরে রয়েছে অনেক ইতিহাস। প্রাচীন ও আধুনিক স্থাপত্যের বিখ্যাত নানা দর্শনীয় স্থান রয়েছে। রয়েছে সত্যজিৎ রায়ের পৈত্রিক ও শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের ঐতিহাসিক বাড়ি।

কবি চন্দ্রাবতীর বাড়ি এবং মন্দির-কবি চন্দ্রাবতীঃ

বাংলা ভাষার প্রথম মহিলা কবি হিসাবে স্বীকৃত। উনার জন্ম ১৫৫০ খ্রিঃ এবং মৃত্যু ১৬০০ খ্রিঃ (আনুমানিক)। কবি চন্দ্রাবতীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার পাতুয়ার/পাটোয়ারী গ্রামে। ফুলেশ্বরী নদীর পাশে পাতুয়ার গ্রাম অবস্থিত। তা কিশোরগঞ্জ থেকে দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। ৪০০ বছরেরও পুরনো স্হাপনা গুলো এখনো মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে।

FB IMG 1595347517712

পাগলা মসজিদ:

মুসলিম ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এক জনপদের নাম কিশোরগঞ্জ। একে ঘিরে রয়েছে অনেক ইতিহাস। প্রাচীন ও আধুনিক স্থাপত্যের বিখ্যাত নানা দর্শনীয় স্থান রয়েছে এখানে। প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো তারই একটি ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ।

জনশ্রুতিতে আছে পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে এসে বর্তমান মসজিদের কাছে স্থিতু হন এবং তাকে ঘিরে আশেপাশে অনেক ভক্তকূল সমবেত হন।

ওই পাগলের মৃত্যুর পর তার সমাধির পাশে পরবর্তীতে এই মসজিদটি গড়ে উঠে। ফলে কালক্রমে মসজিদটি ‘পাগলা মসজিদ’ নামে পরিচিত পায়। এই মসজিদটি শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীর কাছে নয়, বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও এর আশেপাশের অঞ্চলে সব ধর্মাবলম্বীর কাছে অত্যন্ত পবিত্র ধর্মীয় স্থান হিসেবে পরিগণিত।

মানুষের বদ্ধমূল বিশ্বাস, যে কেউ একনিষ্ঠ নিয়তে এ মসজিদে কিছু দান করলে তার ইচ্ছা পূর্ণ হয়। ফলে সাধারণ মানুষ এমন বিশ্বাসের আলোকে পাগলা মসজিদে প্রচুর দান-খয়রাত করে থাকেন।

ঈশা খাঁর জঙ্গল বাড়ি দূর্গঃ

জঙ্গলবাড়ি দূর্গ বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলায় অবস্থিত ঈশা খাঁর স্মৃতিবাহী একটি স্থাপনা। মসনদে-আলা-বীর ঈশা খাঁ ছিলেন বাংলার বার ভূঁইয়াদের প্রধান। ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি প্রকৃতপক্ষে ঈশা খাঁর দ্বিতীয় রাজধানী ছিল। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর কর্তৃক তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।

ঈশা খাঁ ১৫৮৫ সালে তৎকালীন কোচ রাজা লক্ষ্মণ হাজরা ও রাম হাজরাকে পরাজিত করে জঙ্গলবাড়ি দূর্গ দখল করেন।

FB IMG 1595347562906


কোচ রাজা লক্ষ্মণ হাজরা বা ঈশা খাঁর কেউ এই দূর্গের স্থপতি নয়। এটি প্রাক-মুসলিম যুগে নির্মিত বলে ধারনা করা হয়। তবে ঈশা খাঁ দূর্গ দখল করার পর এর ভিতরে কিছু স্থাপনা নির্মাণ করেন।

মুসা খান কর্তৃক মুগল আধিপত্য স্বীকার করে নেবার পর ঈসা খানের বংশধরগণ সোনারগাঁও থেকে জঙ্গলবাড়ি দুর্গে তাদের পরিবারবর্গকে স্থানান্তর করেন।

গাঙ্গাটিয়া জমিজার বাড়িঃ

গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি। প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন এই জমিদার বাড়িটি অষ্টাদশ শতকের গ্রীক স্থাপত্যকলা অনুযায়ী নির্মিত। ব্রিটিশ শাসনামলের শুরু থেকেই তাদের জমিদারিত্ব শুরু হয় এবং দেশ ভাগের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে তাদের জমিদারিও শেষ হয়।

FB IMG 1595348778296

লেক সিটিঃ

শহরের গুরুদয়াল কলেজসংলগ্ন এলাকায় মৃত নদীতে এখন গড়ে উঠছে রাজধানী ঢাকার হাতিরঝিলের আদলে লেকসিটি। এতে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ। নির্মাণ প্রায় শেষ উন্মুক্ত মঞ্চ এবং ওয়াচ টাওয়ার।

শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠঃ

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান (এগার সিন্ধুর দূর্গ অন্যতম কিন্তু একদিনে সম্ভব না)

কিশোরগঞ্জ কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে ট্রেনে অথবা বাস যোগে কিশোরগঞ্জ আসতে পারেন। ট্রেনে কিশোরগঞ্জ মুখি এগারসিন্ধু এক্সপ্রেস কমলাপুর থেকে ৭ঃ৩০ মিনিটে ছাড়ে। ভাড়া- ১২৫ / ১৪৫/ ২০০
অথবা বাসে অনন্য / যাতায়াত বাস সায়দাবাদ থেকে ছাড়ে। ভাড়া- ২৫০

কিশোরগঞ্জ শহরে পৌছে ইজিবাইক- ৫/১০ টাকা / রিক্সা-১৫/২০ টাকা যোগে চলে আসবেন একরামপুর (স্হানীয় কাউকে বললে একরামপুর যাওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দেবে)। একরামপুর থেকে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ রিকশা যোগে যাওয়া যায় ভাড়া নিবে ১৫/২০ টাকা।

তারপর একরামপুর ফিরে এসে ইজিবাইকে জঙ্গলবাড়ি বাজার, ভাড়া-২০ টাকা। বাজারে গিয়ে ২ মিনিট পূর্ব দিকে হাঁটলেই জঙ্গলবাড়ি দূর্গ।

জঙ্গলবাড়ি দূর্গ দেখা শেষ করে জঙ্গলবাড়ি বাজার থেকে কিশোরগঞ্জ শহিদি মসজিদের সামনে যাবেন ভাড়া ২০ টাকা।

শহিদি মসজিদের সামনে ইজিবাইক ড্রাইভারকে বললে কবি চন্দ্রাবতীর বাড়ি নামিয়ে দেবে ভাড়া ১৫ টাকা করে নেবে।

কবি চন্দ্রাবতীর বাড়ি, মন্দির দেখা শেষ হলে আবার ইজিবাইকে শহিদি মসজিদের সামনে আসবেন।

শহিদি মসজিদের সামনে থেকে পশ্চিম মুখি ইজিবাইকে যাবেন বটতলা গুরুদয়াল সরকারি কলেজের সামনে, ভাড়া নিবে ৫ টাকা, সেখানে গুরুদয়াল কলেজদ্বয় লেক সিটিতে আড্ডা দিয়ে তার একটু সামনে ২ মিনিট হাঁটলে পাগলা মসজিদ।

বটতলা থেকে গাঙ্গাটিয়া বাজারের ইজিবাইক পাওয়া যায় ভাড়া নিবে ২০ টাকা। বাজারের পশ্চিম পাশেই গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি।

সাথে জমিদারের মৎস প্রকল্প দেখতে পারেন।

গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি থেকে ফিরে এসে বটতলা থেকে ইজিবাইকে নতুন জেলখানা মোড়ে এসে কিশোরগঞ্জ থাকে কটিয়াদি চলে যান। ভাড়া ৫০/৬০ টাকা নিবে।

কটিয়াদি থেকে মসূয়া ভাড়া নিবে ৩০ টাকা। বাজারের পাশেই সত্যজিৎ রায়ের পৈত্রিক ও শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের বাড়ি।

তারপর আবার কটিয়াদি ফিরে কটিয়াদি থেকে ঢাকার বাসে চেপে ফিরতে পারেন। জলসিড়ি/স্বর্ণলতা ভাড়া নিবে ১৮০ টাকা মহাখালী পর্যন্ত।

বিশেষ সতর্কতাঃ দেয়ালে আঁকাআকি করবেন না এবং খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ যেখানে সেখানে ফেলে রাখবেন না।

নাসিম কবির
শিক্ষার্থী, ফিজিওথেরাপি বিভাগ (২য় বর্ষ)
সাইক কলেজ অব মেডিকেল সাইন্স
(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত)