AddText 01 20 12.43.02

কলোনি নম্বর একশ বারো, ভবিষ্যতের পৃথিবী (সাল ২২৫০)

সাহিত্য

ভবিষ্যতের পৃথিবী (সাল ২২৫০), টিং টং শব্দ হল কল বেলের। টিভি ক্যামেরায় দেখা গেল আজকের বরাদ্দ রেশনের খাবার এসেছে। পঁচিশ বছরের যুবক পুরুষ এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলল। তার সামনে স্বল্পবসনা একজন এলিভেটর থেকে নামছে। হাসিমুখে এগিয়ে গেল নিজের বাড়ির দরজার দিকে। নতুন প্রতিবেশী বুঝি। ভেবে হাসল সুঠামদেহী পুরুষ।

পৃথিবীতে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বেড়ে গেছে। মানুষের স্বার্থপরতায় ধ্বংসপ্রায় পৃথিবীতে কেউই মুক্তভাবে নিশ্বাস নিতে পারে না। অতয়েব শেষ ভরসা ভার্চুয়াল রিয়ালিটি। অর্থাৎ মাথায় হেলমেট পরে আপনি একটি চেয়ারে বসবেন।

যাবতীয় ইন্দ্রিয়ের অনুভব থাকবে কিন্তু সব মিথ্যে। মানুষেরা একেকটা রূপে বা অবতারে হেলমেট লাগিয়ে ওই নকল জগতে প্রবেশ করে। আজকে লানা অর্থাৎ ওই যুবার প্রতিবেশী মেয়েটি ভার্চুয়াল জগতে দৌড়োবে আর তীর ধনুক দিয়ে নিশানা লাগাবে। তার পরনে দৌড়োনোর পোশাক আর কাঁধে তীর ধনুক। আজকে নিজের অবতার দেখে নিজেই মুগ্ধ হচ্ছে লানা।

লানা তার প্রতিবেশী যুবককে দেখে চিনতে পারল।ওর বাঁহাতে একটা উল্কি আছে। ওর অবতারেও সেই এক উল্কি। লানা দৌড়োচ্ছে। কলকল করে একটা ঝর্ণা মতো জায়গা পেরিয়ে লানা এবার শিকার করবে। সমস্ত ইন্দ্রিয় একীভূত করে লানা শিকারের দিকে তাকিয়ে আছে।

হঠাৎ লানাকে কেউ মুহূর্তের মধ্যে পেছন থেকে চেপে ফেলে দিল। আর কিছু বুঝে ওঠার আগেই বলপ্রয়োগ শুরু করল। নকল জগতে তীব্র যন্ত্রণার মাঝে একটা ইমার্জেন্সি বোতাম চেপে বেরিয়ে আসা যায়। লানা ওর আক্রমণকারীকে দেখতে পায়নি। এখনো ওই কুৎসিত স্মৃতি মন থেকে মোছার চেষ্টা করছে। ওর চোখে পানি চিকচিক করছে।

নকল জগতে সাইবার পুলিশ বলে একদল লোক আছে যাদের কাজ ওই জগতের শৃঙ্খলা রক্ষা করা। মুহূর্তেই মূল কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করল সাইবার ন্যানি। কোড রেড এলার্ট।

নিহান ভারী বিরক্তি নিয়ে তার সামনের বড় স্ক্রিনের দিকে তাকালেন। আবার কলোনী নম্বর একশো বারো? বঙ্গোসাগরের এই বদ্বীপের কলোনির লোকজন কি তাকে একটু শান্তিতে থাকতে দেবে না। কোড রেড অর্থাৎ অপরাধ গুরুতর। আর অপরাধী একই অপরাধ দুবার করেছে। এর আগে তাকে লঘু শাস্তি দেয়া হয়েছিল।

একইভাবে সে এক মেয়েকে ভার্চুয়াল জগতে ধর্ষণ করার জন্য আক্রমণ করেছিল। সেবার তার মস্তিষ্কে তরঙ্গ পাঠিয়ে অনুভূতি দেয়া হচ্ছিল যে তার জননাঙ্গ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। মনে হচ্ছে না তার ওই শাস্তিতে কোনো কাজ হয়েছে।

এবার তাকে চরম শাস্তি দেয়া হবে। নির্দিষ্ট মাত্রার অচেতন করার গ্যাস ধীরে ধীরে ছেলেটির ঘরে মূল শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের সিস্টেম দিয়ে প্রবেশ করানো হল। একটা কালো অ্যাম্বুলেন্স গভীর রাতে ওই যুবাপুরুষকে উঠিয়ে নিয়ে গেল। নিহানের খুব খারাপ লাগছে। সৃষ্টির কি নিদারুন অপচয়। হাই আই কিউ। সুদর্শন আর তার সঙ্গে বেশ কর্মঠ।

বেশ কিছু মানুষ একটা অপারেশন থিয়েটার এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই টাকা দিয়ে ওই যুবকের বিভিন্ন অঙ্গ কিনছে। আসলে মৃত্যুদণ্ডকে ভবিষ্যতের পৃথিবীতে অপচয় হিসাবে ভাবে মানুষ। সব রিসাইকেল হয়। সরকার নাগরিকদের পয়সায় জেলে এই সামাজিক কীটগুলোকে আর পালন করেন না।

ভীষণ তেজস্ক্রিয়তায় মানুষের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। ধর্ষণ খুন আর হানাহানির পৃথিবীতে নারীরা বললেন তারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর পৃথিবীতে অপরাধীদের আনবেন না।

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিকদের একটা দল বের করলেন এই পন্থা। পৃথিবীর মানুষদের থেকে কৃত্রিম উপায়ে বেশ কিছু মানব ভ্রুন বিশেষ উপায়ে শীতল করে রাখলেন। জেনেটিক নানারকম পরীক্ষা করেই ভ্রুণগুলো পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়। কিন্তু তবুও প্রকৃতি মাঝে মাঝে ভুল করে। এই যেমন একশো বারো নম্বর কলোনির সেই সুঠামদেহী সুদর্শন যুবক।

নিহান গভীর হতাশায় বঙ্গোপসাগরের দিকে তাকিয়ে রইলেন। মানুষের অনুকরণে তার কপালে একটা নীল আলো জ্বলে উঠল। নিহান প্রায় দুই শত বছর এর পুরোনো রোবট। বিজ্ঞানীদের মৃত্যুর পরে একদল কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট এখন মানব সম্প্রদায়কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণিত অপরাধ খুন, ধর্ষণ আর শিশুদের ওপর অত্যাচার। ধর্ষণের এখনো সর্বোচ্চ শাস্তি।

একশো বারো নম্বর কলোনির নামকরণ হয়েছে কারণ একশো বারো বার নিহানের ওই কলোনী পুরোপুরি ধ্বংস করতে হয়েছে। নিহান গভীর হতাশায় মূল নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বের হলেন। বেরিয়ে দেখেন একটি নতুন রোবট হাউমাউ করে কাঁদছে। রোবটদের মাঝে মানবিক অনুভূতি যে দিয়েছে সেই রোবটের বাচ্চার মনে মনে মুণ্ডুপাত করলেন নিহান

এগিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,” কি হয়েছে?”
ক্রন্দনরত রোবট উত্তর দিল, “একটা ছোট্ট ভুল করেছি আর আমাকে সহকর্মী রোবট আমাকে মানুষের বাচ্চা বলে গালি দিয়েছে। বলুন তো আমি কি মানুষের মত ধর্ষণ করি; স্বজাতিকে খুন করি।”

নিহান ভাবলেন ওর মানবিক আবেগের সেটিং একটু বদলে দিতে হবে। মনে মনে তার স্রষ্টা মানুষগুলোর ওপর ভারী কৃতজ্ঞ বোধ করলেন ভাগ্যিস তিনি রোবট মানুষ নন।

ঘোষণাঃ আপনার লেখা গল্প পত্রিকায় প্রকাশের জন্য যোগাযোগ করুন বাংলানিউজ ইনফোর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেঃ
https://www.facebook.com/banglanewsinfo.official

লেখকঃ ফারহানা সিনথিয়া
ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার