ইতিকাফের ফজিলত ও উপকারিতা অনেক। ইতিকাফ আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে বান্দার নিবিড় সম্পর্ক তৈরির মাধ্যম। দরবারে ইলাহি পর্যন্ত পৌঁছার সেতুবন্ধ। রাব্বুল আলামিনের চূড়ান্ত সান্নিধ্য অর্জনে নিজেকে সঁপে দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। ইতিকাফের মাধ্যমে সত্যিকারার্থেই হৃদয়ে এক অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জিত হয়। অনুভব হয় হৃদয়জুড়ে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর। সৃষ্টি হয় মহান মালিকের সন্তুষ্টির পথে চলার অনুপ্রেরণা, উৎসাহ ও উদ্দীপনা। আর এজন্যই নবী কারিম (সা.) নিয়মিত ইতিকাফ করেছেন।
প্রখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘প্রতি রমজানের শেষ দশকে রাসুল (সা.) ইতিকাফ করতেন। তবে যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফে কাটান। (বুখারি শরিফ : হাদিস ১৯০৩)। ইতিকাফের নানাবিধ উপকারিতা রয়েছে।
ইতিকাফের ফজিলত ও উপকারিতা
শবে কদর প্রাপ্তি
সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো, শবে কদর প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা মাহে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’ (বুখারি : ২০১৭)। যেহেতু ইতিকাফকারীরা রমজানের শেষ দশকে মসজিদেই অবস্থান করেন এবং সর্বদা আল্লাহর ধ্যানে নিজেদের মগ্ন রাখেন, নিয়োজিত রাখেন নিজেদেরকে- আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজে, বিধায় আশা করা যায়, তারা শবে কদর পেয়ে যাবেন।
মসজিদের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক
ইতিকাফকারীরা ধারাবাহিকভাবে যখন ১০ দিন মসজিদে অবস্থান করেন, স্বভাবতই মসজিদের সঙ্গে তাদের একটা হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়, ভালোলাগা ও ভালোবাসা তৈরি হয়। এই সম্পর্ক হাশরের ময়দানে তাদেরকে উপকৃত করবে। সম্মানের মুকুট পরাবে। নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘সাত শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ তায়ালা হাশরের ময়দানে আরশের নিচে ছায়া দেবেন। তন্মধ্যে অন্যতম হলো, যাদের হৃদয়টা মসজিদের সঙ্গে ঝুলন্ত থাকে।’ (বুখারি : ৩২১৫)।
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা বান্দাদেরকে ডেকে ডেকে বলবেন, আমার প্রতিবেশী লোকেরা কোথায়? তখন ফেরেশতারা বলবেন, আপনার প্রতিবেশী আবার কারা? তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, যারা দুনিয়ায় আমার ঘরের (মসজিদ) সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক রেখেছে এবং মসজিদ নির্মাণে ভূমিকা রেখেছে।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১০/২০৩)
গুনাহমুক্ত থাকার সৌভাগ্য
মসজিদের পরিবেশ ইবাদতের জন্য অনুকূল। গুনাহের কাজের প্রতিকূল। ফলে সহজেই গুনাহমুক্ত থাকা যায়। কারণ মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব রয়েছে। পরিবেশ মানুষকে প্রভাবান্বিত করে দারুণভাবে। এ কারণেই আল্লাহ তায়ালার ইরশাদ হলো, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ১১৯)
আত্মার প্রশান্তি
ইতিকাফকারী মসজিদের পরিবেশে থাকার কারণে হৃদয়ে সত্যিকারের এক প্রশান্তি অর্জন করেন। কারণ তারা আল্লাহ তায়ালার স্মরণে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখেন, তাসবিহ-তাহলিল ও জিকির-আজকারে মশগুল থাকেন। ফলে তাদের হৃদয়ের উৎকর্ষ সাধন হয় ও প্রশান্তি অর্জন হয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জেনে রাখো, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরগুলো শান্তি পায়।’ (সুরা রাদ : ২১)
সময়ের হেফাজত
পৃথিবীতে মানুষ যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি অপচয় করে, সেটি হলো সময়। সময়ের অবমূল্যায়ন হয় সবচেয়ে বেশি। এ কারণে নবীজি (সা.) বলেন, এমন দুটি নেয়ামত আছে, যে দুটিতে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তা হচ্ছে সুস্থতা আর অবসরতা। (বুখারি : ৬৪১২)।
ইতিকাফকারীদের ওপর আল্লাহ তায়ালার বিশেষ রহমত, তারা সময়ের হেফাজত করতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গে সময়কে সওয়াব অর্জনের পেছনে ব্যয় করেন। ব্যয় করেন আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির কাজে।
নফল ইবাদতের সুযোগ
ইতিকাফের সবচেয়ে বড় একটি উপকার হচ্ছে, অধিক পরিমাণে নফল ইবাদতের সুযোগ পাওয়া যায় আর নফল ইবাদতের দ্বারা বান্দা আল্লাহর নিকটবর্তী হয়ে যায়।
যেমনটি হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত হয়েছে- ‘আল্লাহ বলেন, আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরজ করেছি, তা দ্বারা কেউ আমার নিকটবর্তী হয় না। বান্দা নফল ইবাদতের দ্বারা আমার নিকটবর্তী হতে থাকবে।’ (বুখারি : ৬৫০২)
সুন্নাতে কিফায়া পালন
মাহে রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। পুরো মহল্লার কিছু মানুষ আদায় করলেই সবার দায়িত্ব আদায় হয়ে যায়। তবে যারা ইতিকাফে বসেন, তারা নবীজির এই সুন্নাতটি অন্যের দ্বারা আদায় না করিয়ে, সরাসরি নিজেরাই আদায় করলেন। (দুররে মুখতার : ২/৪৪০)।
ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিকাফের ফজিলত ও উপকারিতা অনেক বেশি। এজন্য প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এই আমল করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ইতিকাফের মাধ্যমে বর্ণিত কল্যাণগুলো লাভ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।