কিছু মানুষের পার্থিব সফলতা দেখে অনেকেই মন্তব্য করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট। নতুবা আমি এত নামাজ পড়েও সফলতা পাই না আর সে কিনা মাঝেমধ্যে নামাজ পড়েই এত এত সফলতা পাচ্ছে।
এ ধারণা মোটেও সঠিক নয়। কারণ পার্থিব সফলতাই যদি প্রকৃত সফলতা হয় তা হলে যারা আল্লাহকে অবিশ্বাস করে, তাদের অনেকে বেশি পার্থিব সাফল্যে ভরপুর! যেমন- ব্যবসায় অনেক অর্থ-কড়ি উপার্জন করছে, উন্নত বেতনে চাকরি করছে। তারা উন্নত টেকনলজি ব্যবহার করছে, অনেক ভালো অবস্থাসম্পন্ন; তা হলে কি তাদের ওপরও আল্লাহ সন্তুষ্ট?
মূলত আল্লাহ আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট নাকি অসন্তুষ্ট এটা বোঝার মাপকাঠি এটা নয়। মহান আল্লাহ কার ওপর সন্তুষ্ট এর কিছু নির্দেশিকা রয়েছে। যখন কোনো মুমিন ভালো কাজের তাওফিকপ্রাপ্ত হবে তখন বুঝতে হবে আল্লাহ তার ওপর সন্তুষ্ট।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ কাউকে সৎপথে পরিচালিত করতে চাইলে তিনি তার হৃদয়কে ইসলামের জন্য খুলে দেন, (আবার) যাকে তিনি বিপথগামী করতে চান তার হৃদয়কে অতিশয় সঙ্কীর্ণ করে দেন, (তার পক্ষে ইসলামের অনুসরণ করা এমন কঠিন হয়) যেন কোনো একজন ব্যক্তি আকাশে চড়তে চাইছে আর যারা (আল্লাহর ওপর) বিশ্বাস করে না, আল্লাহ এভাবেই তাদের ওপর নাপাকি ছেড়ে দেন।’ (সুরা আনআম : ১২৫)।
হজরত সুরাইজ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ যখন কোনো বান্দার কল্যাণ চান তখন তার মৃত্যুর আগে তাকে ভালো কাজের জন্য তার বক্ষকে উন্মোচিত করে দেন। এরপর তাকে মৃত্যু দেন।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৭৭৮৪)।
তাই প্রতিনিয়ত দুনিয়ার পদমর্যাদা না দেখে এদিকে লক্ষ করা যে, মহান আল্লাহ আমার দ্বারা কোন ধরনের কাজ করাচ্ছেন। অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা সৎপথে চলবে, আল্লাহ তায়ালা তাদের এ (সৎপথে) চলা আরও বাড়িয়ে দেন এবং তাদের (অন্তরে) তিনি তার ভয় দান করেন।’ (সুরা মোহাম্মদ: ১৭)।
তিনি আরও বলেন, ‘যারা আমারই পথে প্রাণপণে চেষ্টা করে, আমি অবশ্যই তাদের আমার পথে পরিচালিত করি।’ (ইসলামের দিকে, তাওহিদের দিকে)। (সুরা আনকাবুত : ৬৯)।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন আল্লাহ তায়ালা কোনো বান্দাহর ভালো চান তখন তিনি তার জন্য ইসলামকে বোঝা সহজ করে দেন।’ (বুখারি : ৭১)
যেকোনো বিপদাপদে আল্লাহ তাকে পূর্ণরূপে ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান করবেন। সে যদি সমাজের নেতা হয় তা হলে তার জন্য আল্লাহ উত্তম সহযোগী ঠিক করে দেবেন।
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা যদি তাঁর কোনো বান্দার কল্যাণ করার ইচ্ছা করেন তা হলে তাকে কাজ করার তাওফিক প্রদান করেন। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি কীভাবে তাকে কাজ করার তাওফিক দেন? তিনি বললেন, তিনি সেই বান্দাহকে মৃত্যুবরণ করার আগে সৎকাজের সুযোগ দান করেন।’ (তিরমিজি : ২১৪২)
সমাজের অনেক মানুষ এমন রয়েছে যাদের ভালো কাজের সদিচ্ছা রয়েছে; কিন্তু তাদের সহচররা তাদের মঙ্গল কামনা করে না। এটাও আপনার প্রতি দয়াময় প্রভুর অসন্তুষ্ট হওয়ার প্রমাণ বহন করে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের কল্যাণের ইচ্ছা করলে তার জন্য একজন সৎপন্থি (অজিরের) সহযোগীর ব্যবস্থা করেন। রাষ্ট্রপ্রধান ভুল করলে সে তা স্মরণ করিয়ে দেয়। আর তার স্মরণ থাকলে মন্ত্রী তাকে সহযোগিতা করেন। আর আল্লাহ তার অকল্যাণ চাইলে একজন খারাপ লোককে তার সহযোগী নিযুক্ত করেন। সে (আল্লাহর নির্দেশ) ভুলে গেলে সহযোগী তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় না আর তার স্মরণ থাকলে সে তাকে সহযোগিতা করে না।’ (আবু দাউদ : ২৯৩২)
দুনিয়ায় অনেক মানুষ এমন রয়েছে, যারা অনেক আমল করে কিন্তু তার আল্লাহ তার ওপর সন্তুষ্ট নন অথচ তার ধারণা সে অনেক ভালো আমল করছে। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘বলুন, আমি কি তোমাদের সেসব লোকের সংবাদ দেব, যারা কর্মের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত? তারাই সে লোক, যাদের প্রচেষ্টা পার্থিব জীবনে বিভ্রান্ত হয় অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করেছে।’ (সুরা কাহাফ : ১০৪-১০৫)
আল্লাহর হুকুম এবং রাসুল (সা.)-এর পদ্ধতি অনুযায়ী আমল করলে সে আমল আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে। কখনও কি ভেবে দেখেছেন আমার আল্লাহ আমার ওপর সন্তুষ্ট আছেন? না কি আমার আমলগুলো শুধু পানিতে অঙ্কন করার মতো বিফলে যাচ্ছে!
কাউকে আল্লাহ অঢেল সম্পদ দেন এটা কি তার প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হওয়ার প্রমাণ? সে বড় পদের অধিকারী, বংশের দিক থেকে অনেক মর্যাদাবান, আরও দুনিয়ার যশ-খ্যাতি এবং কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ-সম্পদের মালিক হওয়া, ভালো চাকরি করা, ব্যবসা-বাণিজ্যে বেশ দক্ষ হওয়া, এগুলোর কোনোটিই তার ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রমাণ নয়। তা হলে আমরা কীভাবে বুঝব আমার আল্লাহ আমার ওপর সন্তুষ্ট রয়েছেন!
যে বান্দাকে আল্লাহ সীমাহীন ভালোবাসেন তাকে কীভাবে আল্লাহ সবার মনের পিঞ্জরে জায়গা করে দেন, তা এই হাদিসে এসেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন তখন তিনি জিব্রাঈল (আ.)-কে ডেকে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালোবাসেন, কাজেই তুমিও তাকে ভালোবাসো। তখন জিব্রাঈল (আ.)-ও তাকে ভালোবাসেন এবং জিব্রাঈল (আ.) আকাশের অধিবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ অমুক বান্দাহকে ভালোবাসেন। কাজেই তোমরা তাকে ভালোবাস। তখন আকাশের অধিবাসী তাকে ভালোবাসতে থাকে। অতঃপর পৃথিবীতেও তাকে সম্মানিত করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি : ৩২০৯)