iffat jahan jessore jashore mm college student

সাধারণ থেকে অসাধারণ অদম্য মেধাবী যশোরের ইফফাত

সাক্ষাৎকার শিক্ষা

৪ বছরের বাচ্চার কথা, “ঘরবাড়ি করে সংসার চালাতে গিয়ে আব্বু হিমশিম খাচ্ছে, কী করা যায়? ছোট্ট থেকে পরিবারের উন্নতি ও উন্নয়নের কথা ভেবে আসা আজ ১৮ বছরের ইফফাত জাহান (দি দশভুজা, দি জিনিয়াস হাজারো বিশেষণের সমারোহ), যার বয়সের দৈর্ঘের চেয়ে অর্জনের হিসাবটা অনেক বড়। এইটুকু বয়সে যা করেছে ও করছে তা সবার কাছে শিক্ষণীয়।

কখনো কলম হাতে দেখিয়েছে তার জাদু, মুখের জাদুতে ছিনিয়ে এনেছে হাজারো পুরস্কার। মেধা ও বুদ্ধি দিয়ে হয়েছেন সবার সেরা। ছোট থেকে সংকল্পবদ্ধ ও পরিশ্রমী মেয়েকে ইফফাত জাহান।

যশোর জেলার কেশবপুর এর সম্ভান্ত্র সরদার বংশের কোল আলো করে অধ্যাপক আব্দুর রশীদ ও শিক্ষিকা সুরাইয়া জাহান এর একমাত্র কন্যা আমাদের আজকের ইফফাত জাহান যার স্বপ্ন আকাশ ছোয়া। দশভুজা বংশের দশভুজা মেয়ে ইফফাত। যশোরের ডিসি, এডিসি থেকে শুরু করে সকল শিক্ষক তাঁকে এক নামে চিনে।

যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন নিয়মিত, মেধাবী ও সংস্কৃতিমনা ছাত্রী ছিল সে। সে পিইসি, জেএসসি ও এস এস সি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ সহ সরকারি ও বেসরকারি মেধাবী বৃত্তি ও মোমিন গার্লস এ ১ম ও ২য় হওয়ায় FSIB থেকে পেয়েছে মেধা বৃত্তি। স্কুলের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায়ও তার ফলাফল ছিল ঈর্ষণীয়। সে স্কুলের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সকল প্রতিযোগিতা (কবিতা আবৃত্তি, বিতর্ক, রচনা, বক্তৃতা, কুইজ, অভিনয়, বানান প্রতিযোগিতা, অভিনয়, যেমন খুশি তেমন সাজ, খেলাধুলা, ছবি আঁকা, বাংলাবিদ, ভাষন, কেরাত, গল্প বলা, বইপাঠ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করছে।

প্রতিবছর শিক্ষা সপ্তাহ, জাতীয় শিশু পুরস্কার, বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, ইন্টারনেট সপ্তাহ, উন্নয়ন মেলা, সৃজনশীল মেধা অন্বেষণে অংশগ্রহণ করে বিদ্যালয়ের সুনাম অর্জন করেছে। সে ম্যাগাজিন, দেয়াল পত্রিকা ও গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। সে ৩ বার স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচনে জয়ী ও ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিল। স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচনে কখনো শিক্ষামন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রী সবশেষে প্রধানমন্ত্রী।

সে চ্যানেল আই “তারায় তারায় দ্বীপশিখা” অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তিতে সেমিফাইনাল পর্যন্ত, রচনাতে সারা বাংলাদেশ এ ২য় হওয়ায় চল্লিশ হাজার টাকা, বঙ্গবন্ধুর ভাষন, রচনা, উপস্থিত বক্তৃতায় বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন, কুইজ ও বিতর্কে নেতৃত্ব দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে এবং জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে যেয়ে যশোরকে তুলে ধরেছে।

২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে সে “বর্ষ সেরা শিক্ষার্থী” নির্বাচিত হয়েছে। মোমিন গার্লস স্কুল আজও গর্ব করে ইফফাত কে নিয়ে।

যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আহসান হাবীব পারভেজ বাংলানিউজ ইনফো‘কে বলেন, “ইফফাত অনেক পরিশ্রমী, ভদ্র, লক্ষ্মী একটা মেয়ে। ওর মতো পরিশ্রমী মেয়ে খুবই কম দেখেছি। এমন চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আমাদের সবার প্রিয় ইফফাত হবে এক জলন্ত নক্ষত্রের নাম। এগিয়ে যাও ইফফাত তোমার অপ্রতিরোধ্য গতিতে।”

iffat-jahan-jessore-jashore-
মার্কস কুইজ কার্নিভাল (সাধারন জ্ঞান) সারা বাংলাদেশে ১ম স্থান অর্জন

স্কুল পেরিয়ে কলেজেও (যশোর সরকারি এম এম কলেজ এর বিজ্ঞান ক শাখার) মেধার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। মার্কস কুইজ কার্নিভালে সারা বাংলাদেশের ৩০,০০০ প্রতিযোগির মধ্যে সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে। ল্যাপটপ পেয়েছে কুইজ প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন হয়ে জিতেছে ৫০,০০০ টাকা। রেটিনাতে সারা বাংলাদেশ এর মধ্যে প্রথম হওয়ায় ৫০০০ টাকা। বিতর্কে ১০,০০০ টাকা। দুদক এর রচনা কমপিটিশন এ ৩০,০০০ টাকা। মুজিববর্ষে “আমার মুজিব ” প্রতিযোগিতায় উপজেলা, জেলা ও বিভাগে সেরা হয়ে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কারের অপেক্ষায় আছে। এছাড়া কলেজের অভ্যন্তরীণ বাহ্যিক সকল প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে।

বাংলানিউজ ইনফো‘র একান্ত সাক্ষাৎকারে ইফফাত বলেন, “সব অর্জনের পেছনে রয়েছে দিনের পর দিন নির্ঘুম রাত, মাথার ঘাম পেয়ে ফেলে করা পরিশ্রম ও বাবা-মা এর দোয়া।”

বাবা-মা ও একমাত্র ছোট ভাইকে নিয়ে ইফফাতের ছোটো পরিবার। দারুণ মেধাবী ভাইকেও দিয়েছেন সাংস্কৃতিক বাতাস। গান, নাচ, ছবি আকাতেও দারুণ দক্ষ সে। নিজে শিখেছে, ভাইকেও শিখিয়েছে। বাবা আম্মু দুইজনই কর্মজীবী হওয়ায় একাই গিয়েছে সব জায়গায় হয়তো কখনো ঢাকা, কখনো খুলনা বা অন্য কোথা – অন্য কোনো খানে। একাই লড়েছে, করেছে রান্না বান্নাও, নিয়েছে দ্বায়িত্ব।

বাবা-মা ও ভরসা পান মেয়েকে দায়িত্ব দিয়ে। মামা-মামী, খালামনির মতো ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর তুখোড় মেধাবী ও সৃজনশীল মেয়ে ইফফাত এর ঘর জুড়ে শুধুই পুরস্কার ও সম্মাননা, ছোটো খাটো একটা লাইব্রেরি তার বাসা।

ইফফাত বাংলানিউজ ইনফো‘কে বলেন, “কাজ করতে,পড়তে ও পড়াতে আমার খুব ভালো লাগে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি পুরস্কার পাওয়া বইগুলো সব পড়ি, ফটোগ্রাফি করি। ADP এবং BRAC, স্বর্ণকিশোরী এর সাথে যুক্ত হয়ে সামাজিক ব্যাধি দূরীকরণে কাজ করছি আমি।”

ইফফাত এখন একজন তরুণ উদ্যোক্তা (ফেসবুক গ্রুপ “যা চাই তাই পাই“), তার অধীনে ১০-১২ জন কাজ করছে। উদ্যোক্তার হওয়ার চিন্তাটা আসে লকডাউনে। ইফফাত বলেন, “করবো কি করবো না এইটা ভেবে সময় নষ্ট না করে শুরু করে দেন দেখবেন যারা পাশে নেয় সময় হলে ভালো করছেন দেখে পাশে থাকবে। শুধু পড়াশোনা করতে হবে এমন না নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগান। বাইরের দেশগুলোর মতো পড়ালেখার পাশাপাশি অন্যান্য কাজ করে আত্মনির্ভরশীল হতে চাই। সময়টাকে কাজে লাগাতে চাই। এখনো অনেক কিছু করার আছে জীবনে,অনেক দূর যাবার আছে।”ব্যবসার শুরুটা সীমিত হলেও স্বপ্ন দেখেন ব্যবসাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন। পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

ইফফাত একাডেমি” নামে তার পরিচালিত একটা কোচিং সেন্টার আছে। একদিকে ৬ষ্ট শ্রেণি থেকে স্টুডেন্ট পড়ায়, অন্যদিকে স্কুলে ফার্স্ট হই, হ্যা এইটাই ইফফাত। ইফফাত আরও বলে, “আমি জন্ম নিয়েছি আমার পরিবারকে সাহায্য করার জন্য, যদিও টিউশনি হোক বা ব্যবসা কোনো টাতেই পরিবারের সাপোর্ট পাইনি। জেদ করে পরিবারের অবাধ্য হয়ে টিউশনি, ব্যবসা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, নিজের পড়াশোনা সবকিছু এক সাথে চালিয়েছি। মার্কেট করতে ও জমি কিনতে বাবাকে দিয়েছি ৩ লক্ষ টাকা।”

ইফফাতের স্বপ্ন তার আম্মুও একদিন রত্নগর্ভা সম্মাননা পাক। প্রবাদ আছে, যে মূলাটা বাড়ে তার পাতা দেখলে বোঝা যায়। প্রবাদটি যদি সত্যি হয় তাহলে বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছে বিরাট একসম্পদ। পড়াশোনার পাশাপাশি হয়তো সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে আলোকিত করবে, হয়তোবা নেতৃত্বগুন দিয়ে আলোকিত করবে আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনকে।

ঘোষণাঃ আপনার জীবনের সংগ্রামী গল্প পত্রিকায় প্রকাশের জন্য যোগাযোগ করুন বাংলানিউজ ইনফো‘র অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেঃ https://www.facebook.com/banglanewsinfo.official